বাবার শেষ সম্বলটুকু নিতে বৃদ্ধাশ্রমে উপস্থিত সন্তানরা 

এহসানুল হক, ফরিদপুর প্রতিনিধি
Jun 16, 2024 - 22:46
 0  23
বাবার শেষ সম্বলটুকু নিতে বৃদ্ধাশ্রমে উপস্থিত সন্তানরা 

ধনী-গরিব সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছে। ঠিক সেই সময় বৃদ্ধাশ্রমে নিরবে চোখের জল ফেলছে চার দেওয়ালে আবদ্ধ একদল বাবা-মা। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! বছরের পর বছর অপলক দৃষ্টিতে পথ চেয়ে আছে কত বাবা-মা। তারা হয়তো ভাবছে এতোদিন না এলেও এবার ঈদে অন্তত ছেলে-মেয়ে বা আত্মীয় স্বজন কেউ না কেউ আসবে আমাদের খোঁজ নিতে। এভাবেই সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে রাত নেমে আসে, তবুও আসেনা স্বজনরা। এক চাপা কষ্ট নিয়ে এভাবেই পার করছে মাসের পর মাস। ফরিদপুর জেলা শহরের টেপাখোলায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন শান্তি নিবাসে (বৃদ্ধাশ্রম) অপরিচিতজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করলেও চরম অসহায়ত্ব ও একাকিত্ব যেন  কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে এ মানুষগুলোকে। তবুও শেষ আশ্রয়স্থল এই বৃদ্ধাশ্রমে ভালোই কাটছে তাদের জীবন। 

তবে এই অসহায় মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে পরিচালনায় সংশ্লিষ্টগণ।  
সাজ্জাদ হোসেন( ৬৫), ফরিদপুর জেলা শহরের গোয়ালচামট এলাকায় তার বাড়ি।
৪ মেয়ে ও ৩ ছেলে সন্তানের জনক এই প্রবীণ। কর্মজীবনে বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। তবে অবসরে যাওয়ার আগেই চাকুরী থেকে অব্যাহতি নেন তিনি। শহরে একাধিক বাড়ি ও টাকাপয়সায় বেশ স্বাবলম্বী ছিলেন বিধায় চাকুরী শেষ হওয়ার আগেই অব্যাহতি নেন তিনি। গোয়ালচামট উত্তরাধিকার সূত্রে একটি বাড়ি ছিলো, ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের পাশে একটি ও কবিরপুরে একটি বাড়ি করেন তিনি। বড় স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি লিখে দেন সাজ্জাদ। কিছুদিন পরেই স্ত্রী মারা যাওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। নতুন স্ত্রী নিয়ে ভালোই চলছিলো সাজ্জাদের সংসার। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতায় তার সম্পত্তিগুলো ধাপে ধাপে বিক্রি করে দেন সাজ্জাদ।

সাড়ে ছয় বছর পূর্বে এই সাজ্জাদকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যান তার পরিবার। এতোদিনে খোঁজখবর না নিলেও কিছুদিন পূর্বে স্ত্রী ও এক ছেলেকে বৃদ্ধাশ্রমে দেখে আবেগাপ্লুত হন সাজ্জাদ। কিন্তু তারা মূলত খোঁজ নিতে আসেনি এসেছে সাজ্জাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিতে। ফটোকপি কেন দিলেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরাতো আমারই সন্তান, তাই আমি না বলতে পারিনি। ওরা ভালো থাকুক। তবে দোয়া করি ওদের যেন আমার মত এমন পরিস্থিতি না হয়। এভাবেই কেটে যাচ্ছে  বৃদ্ধাশ্রমে থাকা অনেক বাবা-মায়ের দিনগুলো। 

এবিষয়ে শান্তি নিবাসের (বৃদ্ধাশ্রম) উপ-তত্ত্বাবায়ক তাহসিনা জামান বলেন, এখানে যারা থাকে তাদের ভালো রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টি করি। ঈদ উপলক্ষে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় ও ঈদের দিন মাংস, পোলাও, সেমাইসহ সব ধরনের খাবার সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যে যেধরনের পোশাক পরে তাদের জন্য সেই ধরনের পোশাকই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। জনবল বাড়ানোর জন্য আমরা ঊর্ধতনদের নিকট চাহিদা দিয়েছি, আশাকরি এ সংকট বেশিদিন থাকবে না।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow