রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মাটিতে যে ফসলই রোপণ করা হোকনা কেনো তার সর্বোচ্চ ফলন পান এ অঞ্চলের কৃষকেরা। তাইতো শীতকালে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি’র চাষ করে বাম্পার ফলনে চোখে মুখে হাসির ঝিলিক হয়ে ফুঁটে উঠেছে এই গ্রামের প্রান্তিক কৃষক শামীম আহমেদ মন্ডলের। অধিক ফলনে লাভের আশায় দিনরাত ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সবজি চাষি শামীম। উর্বর মাটি খ্যাত রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মাঠে গেলে দেখা মেলে এমন চিত্র। আর ব্যপারীরা সরাসরি মাঠ থেকে চাষিদের নিকট হতে বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠাচ্ছে।
কৃষক শামীম আহমেদ বলেন, গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি ও বাঁধাকপি বছরের ১ লা আষাঢ় মাসে শুরু হয়। প্রতিবিঘা জমিতে সাড়ে ৩' হাজার থেকে ৪ হাজার পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। বীজতলায় চারাগাছ থেকে শুরু করে মাত্র ৩ মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ করে বিঘা প্রতি প্রায় লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করা যায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গোবিন্দপুর গ্রামের মাঠে প্রান্তিক কৃষক শামীম আহমেদ মন্ডল ফুলকপি ও বাঁধাকপি ক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ অধিক ফলনের আসায় ক্ষেত পরিচর্যা করেছেন তিনি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি শীত মৌসুমে বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষকরা টপিকসান প্লাস ও অটোম কুইন জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন। এদিকে চাষি শামীম বলছেন, কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি, জমি চাষ, বীজ, সার, সেচ, শ্রমিক খরচসহ এবার প্রতি বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষে খরচ হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। তবে চারা রোপনের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ দিনেই ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারজাত করা শুরু করি। প্রতি পিস ফুলকপি ৫০থেকে ৬০ টাকা ও বাঁধাকপি ৪০থেকে ৫০ টাকা পাইকিরি দরে বিক্রি করেছি।
জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন প্রকার শীতকালীন সবজির দাম বেশি হওয়ায় ফুলকপি ও বাঁধাকপির কদর রয়েছে বেশ। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করতেও বেগ পোহাতে হচ্ছে না আমাদের। পাইকারী দামে জমি থেকেই এসব সবজি ক্রয় করে তা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন অনেক ব্যাপারী।
বালিয়াকান্দি উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের চাষি শামীম আহমেদ মন্ডল বলেন, আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ লাভজনক হওয়ায় তিনি প্রায় ১ একর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেরীতে হলেও অল্প দিনের মধ্যেই বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি তুলতে পারেছেন বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করতে পেরেছেন।
আরও কয়েকজন সফল চাষী বলেন, অধিক ফলন ও লাভের আশায় আমরা প্রতি বছরই জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে থাকি। বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষে ঝুঁকেছি। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার কীটনাশকের ডোজ দ্বিগুণ দিতে হয়েছে বলে জানান।
সবজি চাষী শামীম আহমেদ মন্ডল বলেন, শীতকালীন আবাদ আগাম চাষে বাজারে চাহিদা বেশী থাকায় দাম বেশি পাওয়া যায়। যে কারণে স্বল্প সময়ে সীমিত খরচে অধিক মুনাফা লাভের আশায় তিনি এবার প্রায় ১ একর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন। তবে এ বছর অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের কারণে খরচের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যায়।
পাইকার ব্যবসায়ী মোঃ সমীর মোল্লা বলেন, কপির বাজার চাহিদা ও সাইজের উপর দাম নির্ভর করে। চলতি বছর কপির সাইজ কিছুটা ছোট হয়েছে। তাই তিনি প্রতিপিচ ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও বাঁধাকপি ৪০থেকে ৫০ টাকায় কৃষকের জমি থেকে কিনে সেগুলো রাজধানী ঢাকায় পাঠিয়ে দেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ফুলকপি ও বাঁধাকপি একটি উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি হওয়ায় বালিয়াকান্দির কৃষকেরা আগাম চাষাবাদে ঝুঁকেছেন। এতে তারা হয়ত ভালো লাভবানও হচ্ছেন। তাছাড়া কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে সার্বক্ষণিক ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির বিবেচনায় কৃষকদের জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ ও দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও তিনি ক্ষতিকর পোকামাকড়দের আক্রমণ রোধে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ প্রদাণ করেন।