বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রতিকী অবস্থান কর্মসূচি
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন কর্মসূচির আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'এই আন্দোলন আওয়ামী লীগের বদলে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন আপনাদের, এই আন্দোলন দাম কমানোর, এই আন্দোলন ঋণের বোঝা কমানোর, বিদ্যুতের দাবিতে—অন্ধকার থেকে আলোতে থাকার, ছাত্রদের শিক্ষার ব্যবস্থা করার।'
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে মান্না বলেন, 'মানুষ ভোট দেয়নি, এখনো দেয় না। এই যে উপজেলা নির্বাচন হলো, বাংলাদেশের ইতিহাসে উপজেলায় এত কম ভোট কখনো পড়েনি। এটা সরকারি হিসাব।'
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, 'নিয়ম ছিল এমপিরা সম্পদের বিবরণ দেবে, যদি গড়মিল পাওয়া যায় তাহলে সেগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটি ব্যাপারেও সরকার ব্যবস্থা নেয়নি। সরকার তো চোরদের সরকার! লুটেরাদের সরকার।
'যাদের কিছুই ছিল না, টাকা বানিয়েছে আওয়ামী লীগের লোক। কত দেখেছি! আমি নিজে আওয়ামী লীগ করতাম। টাকা নেই, ঠিক মতো খেতে পায় না, দুই পাড়ে ভাঙ্গা গাল; এখন লক্ষ-কোটি টাকা কামাইয়ের পরে, চেহারা দেখবেন, যদি ছবি দেখেন, ওই ভাঙ্গা গাল ফুলে হয়েছে তাল তাল। কত সুন্দর চেহারা! আওয়ামী লীগ সারা দেশের জনগণকে অসুস্থ করে নিজেদের চেহারা ভালো করেছে,' বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মান্না বলেন, 'আমি তো বিএনপি করি না। বিএনপির অনেক ব্যাপারে আমার সমালোচনাও আছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা এভাবে জেল খাটার পরে, এত নির্যাতন আমি কোনো গণতান্ত্রিক দলের-বিশ্বে তেমন বেশি দেখি নাই। তারা এখনো আছে।
'জিনিসের দাম যে সরকার কমাতে পারে না, বিদ্যুতের দাম কমাতে পারে না, বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখন ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, ওই ঋণের টাকা শোধ করার জন্য আবার বিশেষভাবে অর্থনৈতিক কাউন্সিলের বৈঠক বসায়। বাইরের যে যে দেশগুলো আছে আমাদের টাকা দেবে বলেছে, বলো তাড়াতাড়ি যাতে টাকা দেয়। না হলে সুদের টাকাও তো দিতে পারবো না। সরকার কি আছে,' প্রশ্ন রাখেন মান্না।
সরকার তিন মাসও থাকতে পারবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'মানুষ মনে করেছিল এই সরকার যাবেই কিন্তু ৭ জানুয়ারি পার হলো, সরকার যায়নি। এখন মানুষ হয়তো ভাবছে, এই সরকারকে তো ফেলতে পারল না বিএনপি, এ বোধ হয় পাঁচ বছরই টিকবে।
'আমি বলছি, পাঁচ বছর বাদ দেন। তিন মাস বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করার টাকা নেই সরকারের কাছে। তিন মাসের পরে থাকবে কী দিয়ে? রিজার্ভ বাড়াতে পারবে? বিদেশ থেকে বিদেশিরা টাকা পাঠাচ্ছে আমাদের এখানে? পাঠালেও সরকারের কাছে যাচ্ছে না। ওরা জানে সরকারটা চোর। অতএব ভিন্নভাবে টাকা পাঠায়। আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই, কেবল মাত্র বিদেশি যদি আমাদের ডলার দেয়, তাহলেই এই দেশ বাঁচতে পারে—নইলে এই দেশ বাঁচতে পারবে না।
সরকার থাকে কি না তার কোনো ঠিক নেই মন্তব্য করে মান্না বলেন, 'যারা মনে করেন, ৭ জানুয়ারির পরে বিরোধী দল দুর্বল হয়েছে, সরকার আরও শক্তিশালী হয়েছে, তাদেরকে অর্থনৈতিক চিত্র দেখার জন্য বলি। বিরোধী দল দুর্বল হয়নি, আমরা আমাদের জায়গায় আছি।'
তিনি বলেন, 'অপেক্ষা করেন, সরকারের এই দুর্বলতা যখন মানুষ বুঝবে তখন আবার রাস্তায় নামবে সবাই।'
আওয়ামী লীগ সরকারকে দিয়ে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে না মন্তব্য করে এই বিরোধী নেতা বলেন, 'ভোট কেড়ে নিয়েছে, জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, আপনার (জনগণ) মাথায় ঋণের বোঝা চাপিয়েছে, বিদ্যুতের দাম বছরে চারবার করে সমন্বয় করবে মানে চারবার করে বাড়াবে। পাঁচ বছর সমন্বয় করলে ২০ বার বাড়াবে। তখন আর বিদ্যুৎ কিনতে পারবেন কেউ? অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে পুরো দেশ।'
প্রতিকী অবস্থান কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন,যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি। শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাধারণ সম্পাদক, কৃষকদল। আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ প্রমূখ।
What's Your Reaction?