বিষুকে ঘিরে কোমর তাঁতে স্বপ্ন বুনছেন তনচংগ্যা নারীরা

আসন্ন বিষু উৎসবকে সামনে রেখে কোমর তাঁতে স্বপ্ন বুনছেন রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার সাপছড়ি উপর পাড়ার তনচংগ্যা নারীরা। কেউ সুতা তৈরি করছেন, কেউ বা রংয়ে ব্যস্ত। কেউ আবার নকশা ফুটিয়ে তুলছেন হাতে তৈরি তাঁতে। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী কোমর তাঁতে চলছে বাহারি ডিজাইনের আকর্ষণীয় পিনোন হাদি তৈরির কাজ।
প্রায় ২০০ নারী ও তরুণী এখন এ কাজে পারদর্শী। বিষুকে ঘিরে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। কাপ্তাইয়ের সাপছড়ি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়—তনচংগ্যা নারীরা সকলে মিলে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন, যেন হাতে বোনা প্রতিটি বস্ত্রেই ফুটে উঠছে সংস্কৃতি আর উৎসবের আনন্দ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১২ এপ্রিল ফুল ভাসানোর মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে শুরু হবে তনচংগ্যা সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব ‘ফুলবিষু’। এ উৎসবে পিনোন হাদি, অর্থাৎ তনচংগ্যা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক বিশেষ গুরুত্ব পায়।
সাপছড়ি পাড়ার স্বপ্না তনচংগ্যা বলেন, “উৎসব এলে পিনোন হাদির চাহিদা বেড়ে যায়। আমরা যেটা কোমরে রশি বেঁধে বুনি, সেটাকেই বলা হয় কোমর তাঁত। এই হাদির বিক্রিতেই অনেকের সংসার চলে।”
আরেক বাসিন্দা সুমি তনচংগ্যা জানান, এখন বাজারে কাঁচামালের সংকট। কোরিয়ান রেয়ন সুতার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে, একটি পিনোন হাদি তৈরিতে খরচও বেড়েছে। তিনি বলেন, “টানা কাজ করলেও একজোড়া পিনোন হাদি তৈরিতে লাগে ১৫ থেকে ২০ দিন। দাম পড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।”
তবে খরচের তুলনায় পারিশ্রমিক কম হওয়ায় দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে। মিনতি তনচংগ্যা বলেন, “একটা কাপড় বুনে ৭ হাজার টাকা পেলেও অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তাই প্রকৃত মজুরি হাতে আসে না।”
বাংলাদেশ তনচংগ্যা কল্যাণ সমিতির কাপ্তাই অঞ্চল সভাপতি অজিত কুমার তনচংগ্যা বলেন, “আমাদের এলাকায় আদিকাল থেকেই তাঁতের কাজ চলে আসছে। বিশেষ করে বিষুকে কেন্দ্র করে পিনোন হাদির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এখন নারীরা ঘরে বসেই আত্মকর্মসংস্থানের পথ তৈরি করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “কোমর তাঁতে তৈরি এই ঐতিহ্যবাহী পোশাক এখন বাণিজ্যিকভাবেও বাজারজাত হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তাদের কর্মসংস্থানের পরিধি আরও বিস্তৃত হতে পারে।”
What's Your Reaction?






