বোয়ালমারীতে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

এমএম জামান, বোয়ালমারী প্রতিনিধি, ফরিদপুরঃ
Apr 24, 2025 - 11:45
 0  6
বোয়ালমারীতে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ময়না আনন্দ চন্দ্র বোস ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

প্রথমে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এরপর তারা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বোয়ালমারী-মহম্মদপুর সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে এবং সেখানে বিক্ষোভে অংশ নেয়।

ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী সোহেল ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার আহ্বান জানালে এবং সঠিক তদন্তের আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হয় ও সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ১৩ জন শিক্ষক ও কর্মচারী সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “২০১০ সাল থেকে আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শুরু থেকেই নীতিনৈতিকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।”

তিনি দাবি করেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতে জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত ১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তৎকালীন বিদ্যালয় সভাপতি মো. মজিবুর রহমান আমিনের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটির মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। প্রধান শিক্ষক নিজে ছিলেন ওই কমিটির সদস্য সচিব। কাজের বিস্তারিত প্রতিবেদন জেলা পরিষদে জমা দেওয়া হয় এবং যথাযথ ছাড়পত্রও প্রাপ্ত হয়।

বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি কেনা সংক্রান্ত অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে পাওয়া বরাদ্দের বিপরীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে টেন্ডারের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। সকল দ্রব্যের ভাউচার ও প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে।

দাতা সদস্যের ফি আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, হাতে হাতে অর্থ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট সদস্য নিজেই ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি বিদ্যালয়ের পুরনো বই বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, “এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়। আদালত তদন্ত শেষে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় মামলাটি খারিজ করে দেন।”

বিদ্যালয়ের একটি ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে অনুমোদন পাওয়ার পর জায়গা খালি করতে গাছ ও একটি জীর্ণ টিনের ঘর দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এ সময় ৭৫ জন ঠিকাদার দরপত্র ক্রয় করেন এবং প্রকাশ্য নিলামে ঘর ও গাছ বিক্রি করে ৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, টিউশন ফি এবং অন্যান্য ব্যয় যথাযথ রেজুলেশন ও যৌথ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। এসব খাতে প্রধান শিক্ষকের এককভাবে অর্থ তোলার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, “শিক্ষকদের বেতন, ভাতা, ব্যাংক জমা, আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ সব কিছু নিয়মিতভাবে করা হয় এবং তা প্রমাণসাপেক্ষে অডিট সম্পন্ন হয়েছে।”

তিনি জানান, এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত অভিযোগও ভিত্তিহীন। এনটিআরসিএ পাস করা শিক্ষক মো. জাফর মোল্যার সনদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য নয়, মাদ্রাসার উপযোগী হওয়ায় শিক্ষা অধিদপ্তর তার আবেদন বাতিল করেছে।

বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ একাধিকবার চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। অভিযোগকারীদের চুরির বিষয়ে তাকে দোষারোপ করার মতো কোনো প্রমাণ নেই বলেও দাবি করেন।

বিদ্যালয়ের নিয়মিত কমিটি না গঠনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২০২২ সালে নির্বাচনের লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা করা হলেও আদালতে মামলা হওয়ায় তা স্থগিত হয়। পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে নতুন নীতিমালা আসায় নির্বাচন সম্ভব হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি নিষ্ঠার সঙ্গে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু কিছু শিক্ষক-কর্মচারী ব্যক্তি স্বার্থে মিথ্যা অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছে। এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র।”

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও সচেতন মহল।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow