ভাঙ্গায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে সাফল্যের নতুন দিগন্ত

সরোয়ার হোসেন, ভাঙ্গা প্রতিনিধি, ফরিদপুরঃ
Mar 15, 2025 - 17:29
 0  3
ভাঙ্গায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে সাফল্যের নতুন দিগন্ত

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। প্রথমবারের মতো এ উদ্যোগ গ্রহণ করে সফল হওয়ায় এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও এ জাতের পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে ভারতীয় ‘নাসিক এন-৫৩’ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে কৃষকরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। পেঁয়াজের ঘাটতি ও আমদানি ব্যয় লাঘবের লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয় এবং তা সফল হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, আমদানিকৃত ‘নাসিক এন-৫৩’ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ ৫০০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। বীজ বিতরণের পর এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে এ জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেন। এতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার পর কৃষকরা আশানুরূপ সফলতা পান।

বীজ, সার, বীজতলা তৈরিতে পলিথিনসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান করা হয় এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বিক পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতি কৃষককে এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে।

এলাকার কৃষকরা জানান, প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সারা বছরই এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব।

উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের কৃষক হাবিব মাতুব্বর জানান, কৃষি বিভাগের সহায়তায় তিনি এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তিনি আগামীতে পেঁয়াজ চাষের পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।

এ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, “চারা রোপণের পর থেকেই রাত-দিন পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণে রেখেছি। ফলে কৃষকরা ভালো ফল পেয়েছেন।”

আলগী ইউনিয়নের পীরেরচর গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি এ বছর প্রায় দুই বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন। সরকারিভাবে সার, বীজ ও পলিথিনসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়ায় তিনি ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে তিনি আরও বেশি জমিতে এ পেঁয়াজ আবাদ করবেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হক আকন জানান, নতুন জাতের পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদানের ফলে এই সফলতা এসেছে।

ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোল্লা আল-মামুন বলেন, “দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ‘নাসিক এন-৫৩’ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও প্রণোদনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক কৃষি বিভাগের তদারকি, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পরিদর্শন ও তৎপরতার ফলে কৃষকরা প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এই জাতের পেঁয়াজ চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন।”

তিনি আরও জানান, “আগামীতে এ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং পেঁয়াজ উৎপাদনের ফলে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশ স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।”

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow