ভাঙ্গায় দুটি পরিবারে চলছে শুধুই আহাজারি, লিবিয়ার গেমঘরে দুই যুবককে গুলি করে হত্যা!
ফরিদপুরের ভাঙ্গার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের মিন্টু হাওলাদারের ছেলে হৃদয় হাওলাদার(১৮) ও একই গ্রামের মজিবর হাওলাদারের ছেলে আকাশ হাওলাদার(২২) এর বাড়ীতে কেবলই কান্নার রোল।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৃদয় হাওলাদার ও আকাশ হাওলাদারকে গুলি করে হত্যার ভিডিও ভাইরাল হয়। এ মর্মান্তিক ঘটনায় দুটি পরিবারের মাঝে বইছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যরা জানান, গত দুই মাস আগে হৃদয় ও আকাশকে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে জনপ্রতি ১৬ লক্ষ টাকায় বাংলাদেশ থেকে ইতালির পথে পাড়ি জমায়।
এরই ধারাবাহিকতায় দুবাই সৌদি আরব হয়ে পৌছে যায় লিবিয়ার গেম ঘরে।
কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় ছিলনা। দালালদের চাহিদা মোতাবেক দুই কিস্তিতে ১৬ লাখ করে টাকা পৌঁছে দিলেও নতুন করে টাকার অংক যেন বাড়তে থাকে।
দালালদের চাহিদামত টাকা না দেওয়ায় দুই যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ দুটি পরিবারের।
শুক্রবার নৃশংসভাবে হত্যার বিভৎস রকমের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই কান্নার রোল পড়ে যায় নিহত দুই যুবক হৃদয় ও আকাশের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালি গ্রামে।
লিবিয়ার বেনগাজি শহরে
গেম ঘরে মাফিয়াদের হাতে গুলিতে নিহত গ্রামের দুই যুবক। এমন খবর শুনতেই গোটা ইউনিয়নের ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত নারী পুরুষ শুক্রবার বিকেলে ভিড় জমায় নিহতের বাড়িতে। স্বজনেরা এলাকাবাসী শান্তনা দিলেও তাদের আহাজারী আর কান্নায় আকাশ- বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
নিহত হৃদয়ের বড় ভাই মোকলেসুর রহমান হাওলাদার জানান, ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত দুই মাস আগে তার ছোট ভাই হৃদয় হাওলদার ও চাচার ছেলে আকাশ দুজনেই বাংলাদেশ ত্যাগ করে। গত চারদিন ধরে তাদের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পডে। কিন্তু আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছোট ভাই ও আকাশের হত্যার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি তার পরিবারের নজরে আসে। মুহূর্তের মধ্যে তারা বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানালে পরবর্তী সকল তথ্য ও ঘটনাটি দেখার জন্য আশ্বস্ত করেন।
শোকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়া পুত্রহারা মিন্টু হাওলদার জানান, তার বন্ধু আবুল কালাম তাকে মোবাইলফোনে জানিয়েছিল তার ছেলে আকাশ ইতালি যাবে। তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে আমি আমার সন্তান হৃদয়কে ও মুজিবরের ছেলে আকাশকে ইতালিতে পাঠানোর জন্য দালাল আলমাস,আনোয়ার এবং আবু তারা মাতুব্বরের হাতে ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করে ছিলাম। কিন্তু তাদের নতুন করে দাবীকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ওরা সাগরের পাড়ে আমার সন্তানকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এ সময় অসহায় পিতা যেন বারবার আটকে যাচ্ছিলেন। আর মা বিলকিস বেগম বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। সন্তান হারানোর বেদনায় লোকসমক্ষে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন অসহায় পিতা। আমরা এর বিচার চাই।
বর্তমান সরকার প্রধানের কাছে তিনি ছেলে হত্যার বিচার দাবী করেন। একই গ্রামের মজিবর হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হতদরিদ্র পরিবারটি জ্বীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করছে। মা লিপিয়া বেগম বারবার বলছে আমার আকাশকে এনে দাও। এদিকে গ্রামের সড়কে দুইটি পরিবারের দুটি প্রাণ চলে যাওয়ার খবরে জড় হওয়া শত শত গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে দালালদের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
What's Your Reaction?