ভাঙ্গায় মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের সাউতিকান্দা গ্রামের সরোয়ার মুন্সির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের নামে হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। শুক্রবার বিকালে ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের হিরালদি গ্রামের আঞ্চলিক সড়কে মানববন্ধন করেন স্থানীয় গ্রামবাসী। এতে কয়েকশ’ নারী-পুরুষসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সরোয়ার মুন্সি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা দিয়ে নিরীহ লোকদের ফাঁসানো হয়েছে। এক শ্রেণির দালাল ও আওয়ামী লীগের সহযোগী কিছু ব্যক্তি মামলা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২০২৪ সালের নভেম্বরে পার্শ্ববর্তী সাউতিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মাতুব্বরের কাছ থেকে পেঁয়াজবীজ ক্রয় করেন হিরালদি গ্রামের এক কৃষক। ক্রয়কৃত পেঁয়াজবীজ অঙ্কুরিত না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ চাওয়ার জেরে গত ১২ ডিসেম্বর সকালে মোস্তফা মাতুব্বর ও তার পুত্র আওলাদ মাতুব্বরের নেতৃত্বে কৃষকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ১০ জন কৃষক আহত হন, যাদের মধ্যে ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মানববন্ধনে স্থানীয় মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, কৃষকদের ওপর অতর্কিত হামলার সময় সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হন সরোয়ার মুন্সি। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান এবং স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছিলেন। ঘটনার আট দিন পর, ১৯ ডিসেম্বর, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু তার স্বাভাবিক মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে মোস্তফা মাতুব্বর, সাংবাদিক সাইফুল্লাহ শামীম, যুবলীগ কর্মী আওলাদ মাতুব্বরসহ কয়েকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে নিহতের পরিবারের কেউ বাদী না হয়ে রহস্যজনকভাবে আওলাদ মাতুব্বর বাদী হয়ে ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, নিরীহ মানুষদের মামলায় জড়ানোর মূল উদ্দেশ্য অসৎভাবে চাঁদা আদায়।
আরেক ভুক্তভোগী স্বর্ণা বেগমসহ কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, মামলায় শহিদুল ইসলাম (স্কুল শিক্ষক), রফিকুল ইসলাম (ব্যাংক কর্মকর্তা) ও ওবায়দুর রহমান (সুগার মিলের কর্মকর্তা)-এর নাম রয়েছে, অথচ তারা ঘটনার সময় তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ছিলেন। তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের উপস্থিতির প্রমাণ উপস্থাপন করবেন।
এছাড়া, ফরিদুজ্জামান লাবলু ও তার বৃদ্ধ বাবা হাজী আব্দুল সালামকেও আসামি করা হয়েছে। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া লাবলুর স্ত্রী সম্পা বেগম বলেন, “আমার স্বামী ও অসুস্থ শ্বশুরকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমার শ্বশুর স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও পারেন না, অথচ তাকে মামলায় কোপানোর অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার পর থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হচ্ছে এবং কয়েকবার টাকা নেওয়াও হয়েছে। আমরা মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি ও প্রকৃত দোষীদের বিচার চাই।”
এছাড়া মামলার পর থেকে হীরালদি গ্রামের নারী ও শিশুরা হুমকির মুখে রয়েছে। মামলার ভয়ে গ্রামবাসী ঘরছাড়া হলে মোস্তফা মাতুব্বরের লোকজন তাদের ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়। ফলে গ্রামবাসীর স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে; স্কুলপড়ুয়া শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, এবং সাধারণ মানুষ হাট-বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছে।
গ্রামবাসীরা আরও অভিযোগ করেন, মোস্তফা মাতুব্বর ও আওলাদ মাতুব্বর সাউতিকান্দা গ্রামের কৃষক মালেক শেখকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন এবং মাহমুদ আকনের বাড়িতে ডাকাতি করেছেন। তারা এলাকায় একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, “মৃত সরোয়ার মুন্সির স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাই-বোন থাকতে কেন আওলাদ মাতুব্বর বাদী হলেন? আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে তারা বাড়ি-ঘর ও জমি দখল করেছেন।”
এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে ভুক্তভোগীরা বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী আওলাদ মাতুব্বর বলেন, “মৃত সরোয়ার মুন্সি আমাদের দলের লোক ছিলেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মিথ্যা।”
এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ হোসেন বলেন, “হত্যা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
What's Your Reaction?






