মিঠাপুকুরে সাজানো ধর্ষণ মামলার পর এবার সাজানো এসিড নিক্ষেপের অভিযোগ
রংপুরের মিঠাপুকুরে পুকুরের সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নিজ বাড়িতে ডেকে চাচা শ্বশুরকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে তিনমাস জেল খাটানোর পর মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ না পাওয়া এবং অভিযুক্তের ডিএনএ টেষ্টের সঙ্গে ধর্ষিতার ডিএনএ টেষ্টের ফরেনসিক রিপোর্টে মিল না থাকায় এবার নিজের দুহাত আংশিক দাহ্য পদার্থ দিয়ে ঝলসিয়ে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নাজমা নামে এক গৃহবধূ। মিথ্যা মামলাবাজ ওই নারীর ভয়ে স্থানীয়রা সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা বলে জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ-মিঠাপুকুর উপজেলার ০৭ নং লতিবপুর ইউনিয়নে গত-বছরের ৩১-আগষ্ট রাতে উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের নিঝাল গ্রামে পুকুরের সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে কৌশলে ওই নারী তার প্রতিবেশী চাচা শ্বশুর সাদেকুল ইসলামকে নিজ বাড়িতে ডেকে সাদেকুল তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ রটিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখেন। ঘটনার পরদিন পর্যন্ত সাদেকুলকে আটক রেখে ওই নারী এবং তার পরিবার মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে রফাদফার প্রস্তাব দেয়।
একপর্যায়ে সাদেকুলের স্বজন সহ উপস্থিত লোকজন ওই নারীর অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বাকবিতন্ডা শুরু হলে স্বজন সহ স্হানীয়রা সাদেকুলকে তালা ভেঙে বের করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ওই নারী ধর্ষণের অভিযোগ এনে সাদেকুল ইসলামকে ধর্ষণের আসামি এবং সাদেকুল ইসলামকে তালা ভেঙে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক নিয়ে আসার ঘটনায় নয়জনকে সহযোগী আসামি সহ অজ্ঞাতনামা আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৩। দীর্ঘ তিনমাস জেল হাজতে থেকে জামিন লাভ করেন অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম। অন্য আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন মন্জুর করেন।
এদিকে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এবং মেডিকেল রিপোর্ট সহ ডিএনএ টেষ্টে দেখা যায়,আসামির সংগ্রহকৃত নমুনার সঙ্গে ধর্ষিতার আলামতের মিল নাই এবং ধর্ষিতার সঙ্গে জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই মামলার বাদী এবং ধর্ষিতা ওই নারী বিভিন্নভাবে বুঝতে পারেন, তার দায়ের করা মামলাটি ভবিষ্যতে মিথ্যা বলে প্রমানিত হতে পারে। এতে হতাশায় ভেঙে পড়েন ওই নারী। কিভাবে সাদেকুল ইসলাম এবং তার পরিবার সহ প্রতিবেশীদের শায়েস্তা করা যায়,সেই কৌশল খুঁজতে থাকেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার (৬-মে) ভোরে হঠাৎ নাজমা বেগম চিৎকার করে উঠে জানান, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে টয়লেটের ভিতরে থাকা অবস্থায় সাদেকুল তাকে এসিড নিক্ষেপ করেছেন। ঘটনার সময় ওই নারীর স্বামী- হামিদুর রহমান বাড়িতে ছিলেন না। ধান কাটা শ্রমিকের কাজ করতে তিনি নিজ জেলার বাহিরে অবস্থান করছিনেন। এই সূযোগে সাদেকুল তাঁকে এসিড নিক্ষেপ করেছেন। ওই নারীর দাবি , টয়লেটের উপর থেকে তাকে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে, কিন্তু শুধুমাত্র হাতের চামড়ার উপরিভাগ ঝলসানো থাকায় অনেকের বিষয়টি সন্দেহ হয়। পরে ওই নারী মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
এসিড আক্রান্ত নাজমা ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম সহ তার ভাইদের অভিযুক্ত করে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করলে পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গোপনে এবং প্রকাশে তদন্ত শুরু করে। নাজমার বিবরণ এবং ঘটনার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কোনো স্বাক্ষী না থাকায় পুলিশের যথেষ্ট সন্দেহ হয় এবং তারা অধিকতর তদন্তের জন্য অজ্ঞাতনামা আসামি করে নাজমাকে একটি মামলা দায়ের করতে বলেন,এবং এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সাদেকুল জামিন থেকে বের হওয়ার পর ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়নি। ঘটনা সাজানো। সাদেকুলের দাবি, পূর্বের মামলায় আমি সহ পরিবার নিঃশ্ব। আমি এসিড কি জিনিস সেটাই দেখিনাই। আর আমি নাকি এসিড নিক্ষেপ করেছি? অভিযুক্ত নাজমার দাবি, তার গোপনাঙ্গ সহ বুকের অনেকাংশে ঝলসে গিয়েছে। কিন্তু হাত ছাড়া আর কোথাও দাহ্য পদার্থ পড়েছে কি-না, সেটা তার পরিবারের লোকজন সহ কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
What's Your Reaction?