মুকসুদপুরে মেডিলাইফ জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রাণ গেলো মা ও শিশুর
মেডিলাইফ জেনারেল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় মুকসুদপুরে প্রাণ গেলো প্রসূতি মা ও শিশুর। ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামে। সাবরিন আক্তার কলি (২০) মুকসুদপুর উপজেলার পালপাড়া গ্রামের তানজিল কাজীর স্ত্রী।
জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল সাবরিন আক্তার কলি প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মেডিলাইফ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। সিজার অপারেশন করার সময় ভুল ইকজেকশনের কারণে ভূমিষ্ট শিশুটি মারা যায়। এছাড়া ডা. মনিরুজ্জামান অপারেশনের সময় প্রসূতি মায়ের কিডনির নাড়ি কেটে ফেলে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতলে প্রেরণ করে। সেখান থেকে টেস্ট করে দেখা যায়, রোগীর কিডনির নাড়ি কাটা পড়েছে। পরে তারা সাবরিন আক্তার কলিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানেও তার একই অবস্থা দেখা যায়।
তারপর নিউরোসাইন্স, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসে সে। সবশেষে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানেই গত ১৫ এপ্রিল ঐ প্রসূতির মৃত্যু হয়।
রোগীর স্বজনরা বলেছেন, মেডিলাইফ জেনারেল হাসপাতলে অনভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে সিজার করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে একাধিক ভুল অপারেশনের অভিযোগ আগেও ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, ডা. মনিরুজ্জামান সার্জারী চিকিৎসক নন। তারপরও তিনি মুকসুদপুর, কাশীয়ানি, ভাঙ্গা ও আলফাডাঙ্গা গিয়ে সিজার করেন। ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোতে ডা. মনিরুজ্জামানের মতো ভুয়া সার্জন দিয়ে সিজার করিয়ে রোগীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। এসব ক্লিনিকে নেই ভালোমানের যন্ত্রপাতি, নেই কোনো ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স। কিভাবে টাকা ইনকাম করবে- সেটাই বড় ব্যাপার। রোগীর কি হলো, সেটা তাদের দেখার বিষয় নয়।
তানজিল কাজী বলেন, আমার স্ত্রী সাবরিন আক্তার কলির প্রসব বেদনা উঠলে মেডিলাইফ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে সিজার করার জন্য ১৩ এপ্রিল অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সে সময় সাদা কাগজে আমার সই নেয় তারা। একটু পরে এসে বলে আপনার বাচ্চা মারা গেছে। সিজারের নামে এই নৃশংস ঘটনা কেন করলো? তারা আমার বাচ্চাকে হত্যা করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি মাত্র দুই বছর হলো। এটি আমার প্রথম সন্তান। আমার স্ত্রী ও সন্তান দু’জনই চলে গেলো। আমার জীবনটা ধংস হয়ে গেল- বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোগীর স্বজনেরা কিছু ক্ষোভ প্রকাশের লেখা ভাইরাল হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া স্ট্যাটাসগুলো হলো- ‘মেডিলাইফ জেনারেল হাসপাতাল একটা কসাইখানায় পরিণত হয়েছে, এদের নাই কোন ভালো ঔষধ, নাই কোন ভাল ডাক্তার, এদের থেকে সাবধান, সবাই এই পোস্টটা দ্রুত শেয়ার করে দেন, যেন আর কোন মায়ের বুক ও স্বামীর কাছ থেকে যেন তার প্রিয় মানুষ না হারায়, আর যেন কোন ভাই তার বোনকে না হারায়, আমরা মেডিলাইফ জেনারেল হাসপাতাল বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি, যেন আমাদের মতন যেন আর কেউ তাদের প্রিয় মানুষ ভালবাসার মানুষ না হারায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মেডিলাইফ জেনারেল হাসপাতালে নেই এমবিবিস ডাক্তার, নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স। আর পরিবেশ নোংরা, নেই ভালো যন্ত্রপাতি। মূলত সিজারের আপারেশন করতে হলে তিনজন এমবিবিএস ডাক্তার ও পাচজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স থাকার কথা থাকলেও ঐ হাসপাতালে তা নেই।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মাদ জিল্লুর রহমান বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।
তিনি আরো বলেন, মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু আমি দ্রুত ঐ হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান ইসলাম শোভন ট্রেনিংয়ে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
মেডিলাইফ জেনারেল হাসপাতালের মালিক রেন্টু খানকে বার-বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি
What's Your Reaction?