মেজাজ খারাপ হলেই স্টাফদের পেটান সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামের তৃতীয় স্ত্রী ফরিদা হক

মোঃ শামীম আহমেদ, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ
Mar 11, 2025 - 14:51
 0  12
মেজাজ খারাপ হলেই স্টাফদের পেটান সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামের তৃতীয় স্ত্রী ফরিদা হক

সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের তৃতীয় স্ত্রী ডা. ফরিদা হকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে নার্স, ড্রাইভার, বাবুর্চি—কেউই তার নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি।

স্বামী কারাগারে থাকায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন ফরিদা। বেপরোয়া আচরণের কারণে একাধিকবার কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখেও পড়েছেন তিনি। এমনকি অন্বেষা নামে এক নার্সিং শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী পরিচয়ে ফরিদা ঠিকাদারি, টেন্ডার, চাকরি, বদলি, পদোন্নতিসহ নানা খাতে অবৈধ লেনদেন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার ঘোষিত নির্দিষ্ট ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ৫-৮ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগও উঠেছে।

ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নির্যাতন ও চাকরিচ্যুত করার ঘটনাও ঘটেছে। ২০২১ সালে তার স্বামী ডা. এনামুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান সুজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন ফরিদা, যা ধামাচাপা দিতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

এছাড়া, ফরিদার বিরুদ্ধে প্রসূতি ও নবজাতকদের মৃত্যু সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে। প্রয়োজনীয় ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও তিনি হাসপাতালের গাইনি বিভাগের আবাসিক সার্জনের পদ দখল করে জটিল অস্ত্রোপচার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

গত ২৬ জানুয়ারি বসুন্ধরা এলাকা থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর থেকেই এনাম মেডিকেলের ভেতরে একের পর এক অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসছে।

অভিযোগ রয়েছে, ফরিদা হাসপাতালের নার্সদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। কর্মীদের ওপর অমানবিক শাস্তি আরোপ করতেন, যা প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার পরিপন্থী। তার কারণে হাসপাতালের কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন।

এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিভিন্ন খাত থেকে আয় করা টাকার বড় একটি অংশ ফরিদার নিয়ন্ত্রণে থাকত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি চিকিৎসকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে অবৈধ লেনদেন করতেন এবং নিজের সুবিধামতো নিয়োগ ও পদোন্নতি দিতেন।

এছাড়া, তার বিরুদ্ধে জমি ও স্বর্ণ কেনার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গোপন করার অভিযোগও উঠেছে। ফরিদার নামে-বেনামে থাকা সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তদন্ত করলে হাজার কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এনামের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে। তবে তার তৃতীয় স্ত্রী ফরিদা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, ‘ডা. এনামের তৃতীয় স্ত্রী সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow