রংপুরে গুলিতে বেরোবি শিক্ষার্থী ও কোটা বিরোধী আন্দোলন সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহত
দেশে চলমান ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে রংপুরেও দুপুরে বেরোবি শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় কোটা বিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে কোটা সমর্থক এবং পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের গুলি রাবার বুলেট নিক্ষেপ লাঠিচার্জসহ ব্যাপক সহিংস ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর একটার পর থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদ (২২) নামে এক শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে নিহত হন। মৃত আবু সাইদ রংপুরের পীরগন্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের পুত্র বলে জানা গিয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আবু সাইদের লাশ নিয়ে মিছিল করতে করতে বিশ্ববিদ্যালয় দিকে ধাবিত হচ্ছে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থী এবং তার সহপাঠীরা।
বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায় , মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে রংপুর জিলা স্কুল সহ শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কোটা বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পুলিশ কয়েক দফায় প্রতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ আবারও তাদের গতিরোধ করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে নগরীর লালবাগ এলাকায় গেলে সেখানে কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায় ,বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মিছিল লালবাগ এলাকায় পৌছিলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে দুপক্ষের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে নিবৃত করার চেষ্টা করে কয়েক রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আবু সাঈদ কোটা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এতে অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি।” আন্দোলনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ“ছাত্রলীগ বহিরাগত টোকাই এবং পিকেটার ভাড়া করে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইট ও পাথর নিক্ষেপ করায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।”
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষে অংশ নেওয়া বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজের মিতা নামে এক এসএসসি শিক্ষার্থী নিহতের দাবি করছেন, তার সহপাঠীরা। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে মিতা নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আহত হয়েছেন পুলিশ সাংবাদিক সহ প্রায় শতাধিক। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ জনের অধিক ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাদের মধ্যে রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক পরিবেশের প্রতিনিধি শাকিল আহম্মেদ গুরুতর আহত।
What's Your Reaction?