রাঙামাটি–আসামবস্তি সড়ক পর্যটন শিল্পে এখন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে আসছে
![রাঙামাটি–আসামবস্তি সড়ক পর্যটন শিল্পে এখন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে আসছে](https://www.kholachokh24.com/uploads/images/202404/image_640x_360_6612376dae5eb.jpg)
একদিকে স্বচ্ছ জলরাশির বিস্তীর্ণ কাপ্তাই হ্রদ। আরেকদিকে ঘন সবুজের উঁচু–নিচু পাহাড়। পাহাড়, হ্রদ আর সবুজের হাতছানি প্রকৃতির সৌন্দর্যকে ডানা মেলে ছড়িয়ে দিয়েছে যেন একটি সড়কেই। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সৌন্দর্য ও নান্দনিকতায় রাঙামাটি–আসামবস্তি সংযোগ সড়কটি পাহাড়ের পর্যটন শিল্পে এখন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে আসছে। পাহাড় আর নীল জলরাশির কাপ্তাই হ্রদের ‘বুক চিরে’ জেগে ওঠা ১৮ কিলোমিটার পরিণত হয়েছে মুগ্ধতার সড়কেপর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা হওয়ার সুবাধে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেশি–বিদেশি পর্যটক, ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। রাঙামাটি–আসামবস্তি সংযোগ সড়কের দুই পাশেই হ্রদ–পাহাড়ের মিতালি পুরো সড়কটির কয়েকগুণ শ্রী বৃদ্ধি করেছে। সাম্প্রতিকসময়ে রাঙামাটির পর্যটন শিল্পের যে উত্থান ঘটেছে; তা এই সড়কটি ঘিরেই। সড়কের সৌন্দর্য ও রূপ লাবণ্যে রাঙামাটির আসামবস্তি বাজার থেকে কাপ্তাই উপজেলার সংযোগটি ঘিরে, ‘লাভ পয়েন্ট ভিউ’, বেশকিছু রিসোর্ট–কটেজ ও খাবারের রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। স্থানীয়রা বিকেলে ঘুরে বেড়ানো ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পছন্দের জায়গা হিসেবে বেশিরভাগই সড়কটিকে বেচে দেন। পাহাড়ে ক্রম–বর্ধমান বন ভূমি উজাড় আর বৃক্ষ নিধনের সবুজের উপস্থিতি কমার বিপরীতে এই সড়ক ঘেঁষে সবুজের আচ্ছাদন যে কাউকেই বিমোহিত করবেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় আসামবস্তি–কাপ্তাই সংযোগ সড়কটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয়। ১২ ফুটের একলেনের সড়কটি ১৮ ফুটের দুইলেনের সড়কে উন্নীত করার কাজ শুরু ২০২০ সালে। তিনটি দৃষ্টিনন্দন আরসিসি স্ল্যাব সেতুসহ ১৮ কিলোমিটার সড়কটির প্রশস্তকরণে ব্যয় হয় ৪৩ কোটি টাকা। ২০২০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল ২০২৩ সালের জুনে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি ভৌগোলিক অবস্থান ও সৌন্দর্যের কারণে বাংলাদেশ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ডেও চ্যাম্পিয়ান হয়েছে।
রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে রাঙামাটির সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় স্থান হলো আসামবস্তি–কাপ্তাই সড়ক। পুরো সড়কজুড়েই মুগ্ধতায় ভরা। একদিকে সবুজে ঘেরা পাহাড় আর আরেকদিকের স্বচ্ছ জলরাশির কাপ্তাই হ্রদ প্রকৃতিকে ঢেলে সাজিয়েছে। রাঙামাটির পর্যটনে সবচেয়ে দারুণ ও উপভোগ্য জায়গা হিসেবে এই সড়কটির বিকল্প এখন আর নেই। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী বলেন, ‘এ সড়কটি পুরো দেশের মধ্যে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন একটি সড়ক। রাঙামাটিতে আগত সকল পর্যটকের অত্যন্ত পছন্দের ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে ইতিমধ্যেই সুনাম কুড়িয়েছে। এর পাশাপাশি এই রাস্তার কারণে পাহাড়ি ফলমূল, সবজি খুব সহজে পরিবহন করা যাচ্ছে। যা এ প্রত্যন্ত অঞ্চলেরর অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলছে। সড়কটি কাপ্তাই উপজেলার সঙ্গে দূরত্ব কমেছে প্রায় ২০ কিলোমিটার।’ এলজিইডি রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, ‘এই রাস্তাটি হওয়ার ফলে পাহাড়ের ট্যুরিজম সেক্টরে বিশাল অবদান রেখেছে। রাঙামাটিতে ঘোরার মতো ভালো কোনো ট্যুরিস্ট স্পষ্ট নেই। ট্যুরিস্ট আসলে ঘোরার জন্য এটি অত্যন্ত ভালো জায়গা। বিভিন্নসময়ে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও মন্ত্রী মহোদয়গণণ এই সড়কের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
আসামবস্তি–কাপ্তাই সংযোগ সড়কের পাশেই রয়েছে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) স্থায়ী ক্যাম্পাস। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক খোকনেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, ‘আসামবস্তি–কাপ্তাই সড়কের ভিউটা পর্যটকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই সড়কের পাশে যে বিভিন্ন কমিউনিটির মানুষ রয়েছেন; তাদেরকে যদি সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে পাহাড়ের অর্থনীতিতেও সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
What's Your Reaction?
![like](https://www.kholachokh24.com/assets/img/reactions/like.png)
![dislike](https://www.kholachokh24.com/assets/img/reactions/dislike.png)
![love](https://www.kholachokh24.com/assets/img/reactions/love.png)
![funny](https://www.kholachokh24.com/assets/img/reactions/funny.png)
![angry](https://www.kholachokh24.com/assets/img/reactions/angry.png)
![sad](https://www.kholachokh24.com/assets/img/reactions/sad.png)
![wow](https://www.kholachokh24.com/assets/img/reactions/wow.png)