রাজশাহীতে ফসলি জমিতে পুকুর খনন

মো: গোলাম কিবরিয়া , জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহীঃ
Apr 14, 2025 - 11:33
 0  4
রাজশাহীতে ফসলি জমিতে পুকুর খনন

রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া মাঠে রাতের আঁধারে শুরু হয়েছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন। কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি আইনের তোয়াক্কা না করেই এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় কৃষকরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন, কারণ তাদের ধারণা, এই পুকুর খননের ফলে আগামী দিনে এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা সংকটে পড়বে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালানোর পেছনে কি রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক কোন স্বার্থ নিহিত আছে?

জানা গেছে, দক্ষিণপাড়া মাঠে পাশাপাশি তিনটি পুকুর খনন চলছে। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করছেন যে, পুকুর খনন শুরু হওয়ার পর থেকেই তাদের ফসল ও সবজি ক্ষেত ধ্বংস হয়ে গেছে। জমিতে আগে পেঁয়াজ, ভুট্টা, ধান, কাঁচামরিচ এবং অন্যান্য সবজির আবাদ ছিল, কিন্তু বর্তমানে ওইসব জমি শুধুই খোঁড়া মাটি ও জলাবদ্ধতার কারণে অপ্রতুল হয়ে পড়েছে।

এলাকার কৃষকরা নিশ্চিত যে, পুকুর খননের প্রক্রিয়া শুরুর আগে কৃষিজমি যথাযথভাবে পরিদর্শন বা অনুমোদনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই তাঁরা এই কর্মকাণ্ডকে ‘অবৈধ’ ও ‘নির্দয়’ হিসেবে অভিহিত করছেন।

এলাকাবাসীরা দাবি করছেন, পুকুর খননকারী ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কি এমন কোনো অশুভ সম্পর্কের মধ্যে রয়েছেন, যা এই কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে? কিছু কৃষকের মতে, পুকুর খননের ফলে জমির মালিকরা দীর্ঘমেয়াদী লাভের আশা করছেন, এবং এই লাভের মাধ্যমে স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের অবস্থান শক্তিশালী হবে।

একাধিক কৃষক জানান, পুকুর খননকারীদের মধ্যে কিছু রাজনৈতিক নেতা বা তাদের আত্মীয়স্বজন আছেন, যারা এই কর্মকাণ্ডে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত। ফলে প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো কার্যকর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফসলি জমিতে পুকুর খনন হলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এবং এর ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। স্থানীয় কৃষকরা ইতোমধ্যে একত্রিত হয়ে ৩০০ জনেরও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন, যাতে তারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে পুকুর খননের বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারে।

এসিল্যন্ড অফিসে আবেদন করার জন্য কৃষকরা স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। এর মাধ্যমে তারা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছেন, যেন অবিলম্বে পুকুর খননের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। তবে, তারা আশঙ্কা করছেন যে, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এই আন্দোলন সফল না-ও হতে পারে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন কি যথাযথভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে? স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং যদি প্রয়োজন হয়, তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। তবে কৃষকদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রশাসন তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান না-ও করতে পারে।

এলাকাবাসী তাদের বক্তব্যে আরো বলেছেন, এই পুকুর খননের ফলে শুধু তাদের কৃষিকাজই নয়, এলাকার পরিবেশ ও জলবায়ু পরিস্থিতিও খারাপ হতে পারে। ফলে তারা দাবি করছেন, প্রশাসন দ্রুত পুকুর খননের কার্যক্রম বন্ধ করতে এগিয়ে আসুক।

এখন সময়ের প্রশ্ন, প্রশাসন কি কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে এ অনিয়ম বন্ধ করবে, নাকি রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে চুপচাপ বসে থাকবে? তবে ফসলি জমির উপর রাজনৈতিক চাপের এই দ্বন্দ্ব, যদি যথাযথভাবে সমাধান না হয়, তাহলে শুধু একটি ইউনিয়ন নয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা বড় সংকটে পড়তে পারে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow