রাজশাহীর একজন মানবসেবক দুখু
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত লক্ষ-কোটি মানুষের ভিড়ে ‘সকলে মোরা সকলের তরে’ বাণীতে বিশ্বাসী ব্যক্তির সংখ্যা নিতান্তই হাতেগোনা। সেই হাতেগোনা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম এক নাম দুখু। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ দুখু একদম সহ্য করতে পারেন না অসহায়-দুস্থদের দুঃখ। তাইতো দীর্ঘ ছত্রিশ বছর ধরে মানবতার সেবায় নিজেকে ব্যাপৃত করেছেন তিনি। প্রতিহত করেছেন সমালোচনার প্রলয়কেও।
দুখুর পুরো নাম আবুল কালাম দুখু। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কর্ণহার থানার অন্তর্গত আফি পাড়ার বাসিন্দা। প্রতিবছর তিনি প্রতিবন্ধী বয়োজ্যেষ্ঠ এবং দরিদ্র পরিবারে শতাধিক কম্বল বিতরণ করেন। কম্বল বিতরণ ছাড়াও সুপেয় পানি পানের জন্য টিউবওয়েল, ঘরের টিন, স্বাবলম্বী হতে ভ্যান ক্রয়, ছোট ব্যবসার পুঁজি, প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ার ইত্যাদি সামাজিক কাজে সবসময় এলাকাবাসীর পাশে থেকে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করেন।
বিগত ৩৬ বছর ধরে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই মূলত এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন তিনি। এছাড়াও সামাজিক নানা উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়ন ও সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাকে স্থায়িত্ব দিতে ‘সংশপ্তক’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গঠনের পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করছেন। তার এই মহৎ উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নে সবসময় পাশে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ কর্ম বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস, অধ্যাপক সৈয়দ আফরিনা মামুনসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মরত ব্যক্তিবর্গ।
অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতার ফলে দুখুর কার্যক্রমের গতি বেড়েছে বহুগুণ। অল্প পরিসরে নিজের অবস্থান থেকে অসহায় মানুষের পাশে থাকতেন দুখু। বর্তমানে ৬টি গ্রামে মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। লক্ষ্য গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানুষের জন্য কাজ করা।
এসব বিষয়ে কথা হয় আবুল কালাম দুখুর সঙ্গে। তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। কত মানুষের সামর্থ-সুযোগ আছে কিন্তু তারা করেন না। আমার কবরে আমাকেই যেতে হবে। আমার হিসাব আমাকেই দিতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করি আমি আনন্দ পাই।
তার কথায়, আমি কখনো এক টাকাও হারাম ইনকাম করি না। কখনো নিজের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে চাঁদা তুলে খায়নি। মানুষের পাশে থাকতে পারি এটাই আমার পাওয়া। কারো খাবার নেই সেটার ব্যবস্থা করা, ফ্যান, হুইল চেয়ার, ঘর করে দেওয়া, চিকিৎসা করানো থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতামূলক কাজ করতে চেষ্টা করি আমরা। গোলাম কিবরিয়া স্যারের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর আমার কাজের গতি বহুগুণ বেড়ে গেছে। যাদের প্রয়োজন আমাকে জানায় আমি স্যারকে বললে উনি সবসময় সহযোগিতা করেন। আমাদের ইচ্ছে আছে একটি সংগঠনের মাধ্যমে পরিসর বাড়িয়ে অনেক অনেক মানুষের জন্য কাজ করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস বলেন, দুখু খুবই জন দরদি এবং সৎ মানুষ। তার মাধ্যমে আমরা মানুষের পাশে থাকতে পারি আমাদের ভালো লাগে। আমার যতটুকু আছে সেটা এবং আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা সবমিলিয়ে আমরা চেষ্টা করছি গরিব-অসহায়দের পাশে থাকতে। সকলে সহযোগিতা করলে আগামীতে আরো বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছে আছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক সৈয়দ আফরিনা মামুন বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। সকলে মিলে ভালো থাকার চেষ্টা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। সকলের কাছে আহ্বান থাকবে নিজের জায়গা থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।
What's Your Reaction?