রুমায় সাংবাদিকের নামে চাঁদা উত্তোলন: অভিযুক্ত ইউনিয়ন সচিব

"আঁকো, টেংগা রা ব্যা ল?"—এটি মারমা সম্প্রদায়ের ভাষা, যার বাংলা অর্থ: "দাদা, টাকা পেয়েছেন কিনা?"। এ প্রশ্ন করছিলেন এক বিবাহিত যুবক, যিনি বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাইন্দূ ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার।
এ প্রতিবেদক পাল্টা জানতে চাইলে, তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, "ওহ, তার মানে আপনি জানেন না! মেম্বাররা সবাই মিলে প্রতিজনে ৭,৫০০ টাকা করে চাঁদা তুলে সচিবের হাতে দিয়েছেন। ওই টাকা সাংবাদিকদের সম্মানী হিসেবে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।"
গতকাল সোমবার (৩১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সদর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এক আলাপচারিতায় পাইন্দু ইউপির দুই সদস্য এসব তথ্য জানান।
আরেকজন মেম্বার, নাম প্রকাশ না করার শর্তে, জানান যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের পরামর্শক্রমে এক বৈঠকে প্রতিটি মেম্বারের কাছ থেকে ৭,৫০০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে উত্তোলিত চাঁদার পুরো অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রাজীব দাস নিজের কাছে রাখতে চাপ প্রয়োগ করেন।
সূত্র জানায়, পাইন্দূ ইউনিয়নে মোট ১২ জন মেম্বার রয়েছেন—এর মধ্যে ৯ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। প্রতিজনের কাছ থেকে ৭,৫০০ টাকা করে আদায় করা হলে মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০,০০০ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাইন্দূ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রাজীব দাস মেম্বারদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি জানান, এর মধ্যে এক সাংবাদিকের হাতে চারজনের জন্য ৮০,০০০ টাকা দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন এবং পরবর্তীতে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের জন্য কাবিটা, কাবিখা প্রকল্পের আওতায় নগদ টাকা ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয় সরকার। এই বরাদ্দের প্রকল্পসমূহ ইউনিয়ন পরিষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার কথা থাকলেও, পাইন্দূ ইউনিয়নে প্রকল্প নির্ধারণের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ও সচিবের একক সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মেম্বারদের দাবি, প্রকল্প বরাদ্দের তথ্য তাদের জানানো হয় না এবং কার্যবিবরণীও দেখানো হয় না। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর নেওয়ার সময় তারা জানতে পারেন প্রকল্পটি কার নামে বরাদ্দ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাইন্দূ ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, "নিজ পাড়ায় অবস্থান করছি, পরে দেখা করে বিস্তারিত আলোচনা করব।"
এদিকে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ কাওসার আলী জানান, "গৃহীত প্রকল্পগুলোর বিপরীতে প্রথম কিস্তির বিল প্রদান করা হয়েছে। শতভাগ কাজ সম্পন্ন হলে চূড়ান্ত বিল ছাড়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করছি।"
What's Your Reaction?






