রুমায় দ্বিতীয় দফায় শান্তি সংলাপে সাত বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরিত
পাহাড়ের শান্তি ফিরিয়ে আনতে দ্বিতীয়বারে মত বহুল আলোচিত পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ),র সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মধ্যে বৈঠক হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল ১০টায় ৪০ মিনিটে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সদর ইউনিয়নের বেথেল পাড়া কমিউনিটি সেন্টার হল রুমে শুরু হয়- দ্বিতীয় দফার এই বৈঠক।
শান্তির এই বৈঠকে বমসহ কুকিচিহীন জাতি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সময়ে আটককৃত ৫৬ জনের মামলা প্রত্যাহার, ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারগুলোকে পূর্ণবাসন ও সশস্ত্র সংঘাতে না যাওয়াসহ সাতটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এসময় বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে ১৩ জন সদস্য এবং কেএনএফে'র সাধারণ সম্পাদক লাল জংময় নেতৃত্বে আটজন সদস্য বৈঠকে অংশ নেন।
কেএনএফের সদস্যরা হলেন, কেএনএফ সেন্ট্রাল কমিটি সাধারণ সম্পাদক ও শান্তি সংলাপে টিম লিডার মি. লালজংময়, কেএনএফ'র সাংগঠনিক সম্পাদক লালসাংলম, উপদেষ্টা লালএংলিয়ান, এক্সেকিটিভ মেম্বার পাস্টর ভানলিয়ান বম, গ্রাহাম বম, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য রুয়াললিন বম, সাংপাহ খুমি, আজৌ লুসাই।
এদিকে বৈঠককে ঘিরে বেথেল পাড়া এলাকায় প্রত্যেকটি স্থানে দেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, বিজিবি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি কেএনএফের শতাধিক সেচ্ছাসেবক এসময় বৈঠক স্থলের আশেপাশে অবস্থান নেয়।
রুদ্ধদার এ বৈঠকে টানা প্রায় তিনঘন্টা ধরে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়েছে । দু'পক্ষের মাঝে সাতটি বিষয়ে স্বাক্ষরিত সমাঝোতা মাধ্যমে এই বৈঠক শেষ হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষে ২০২৩ সালের জুন মাসে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লার নেতৃত্বে ১৮ জন সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়- শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। পাহাড়ে বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকবার ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক হলেও সবশেষে গত ৫ নভেম্বর রুমার মুনলাই পাড়ায় কেএনএফ এর সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বৈঠকে চারটি বিষয়ে দু'পক্ষে মাঝে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। এবার দ্বিতীয় বৈঠকে সাতটি বিষয়ে দাবী উপস্থাপন তুলে ধরেন কেএনএফ সদস্যরা।
কুকি-চিন ন্যশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)র সাংগঠনিক সম্পাদক লাল সাং লম বম বলেন, গতবারে বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে যেসব দাবী স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেগুলো থেকে যেসব বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলোসহ নতুনভাবে যোগ করে সাতটি দাবী স্বাক্ষরিত করা হয়েছে। আশা করছি অতিশিঘ্রই শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি সেই বিষয়ে কাজ করবেন এবং একটি সুফল বয়ে আনবে বলে আমাদের দীর্ঘ বিশ্বাস।
এলাকার শান্তি ফিরে আসার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে লাল সাং লম বম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি অবশ্যই শান্তি ফিরে আসবে এবং আমরা শান্তির পথে যাচ্ছি। তাছাড়া একদিনে ত শান্তি ফিরে আসে না। পারস্পরিক আলোচনা এবং এবারে দ্বিতীয়বার মত আলোচনা হয়েছে ও পর্যায়ক্রমে এই এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো। কাজে এই এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠা হবেই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন লালসাংলম বম।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি মুখ্যপাত্র কাঞ্চন জয় তংচঙ্গ্যা ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, উপস্থাপিত বিষয়গুলো মধ্যে আমাদের দ্বারা সম্ভব না, সেগুলো কেন্দ্রীয় সরকার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার সাথে কেএনএফ মাধ্যমে যদি যোগাযোগ হয় সেটি আলাদা বিষয়। আর আজকের আলোচনায় তাদের যে সাতটি উপস্থাপন করা হয়েছে সেটি আমরা নোট করে নিয়েছি। সংলাপ চলাকালীন এলাকার শান্তিপূর্ণ বজায় রাখবার বিষয়ে একমত হয়েছে।
বৈঠক শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা সাংবাদিকদের জানান, ২০২৩ সালে প্রথম বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরো কয়েকটি দাবি-দাওয়া যোগ হয়েছে। কেএনএফের যে দাবী-দাওয়া গুলো রয়েছে সেগুলো সরকার কাছে উপস্থাপন করা হবে।
ক্যশৈহ্লা বলেন, আজকে দু'পক্ষে যে আলোচনা হয়েছে সেটি খুব কাছাকাছি এসেছি এবং আগামীতে আরো বৈঠকে মাধ্যমে সমাধান আসবে। তাছাড়া পাহাড়ের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।
বৈঠকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত পলিশ সুপার আব্দুল করিম,শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা, লালজার লম বম, লাল থাং জেল, লাল ভান তিলিং বম, মনিরুল ইসলাম মনু, উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যা, সিঅং খুমী, সিংইয়ং ম্রো, কৃপা ত্রিপুরাসহ পুলিশ, বিজিবি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উলেখ্য, বিভিন্ন সময়ে কেএনএফ'র সশস্ত্র সদস্যদের সাথে সেনাবাহিনী গোলাগুলিতে ৫জন সেনা সদস্য নিহত হন। এঘটনায় ৫৬ জন কেএনএফ সদস্যদের আটক করা হয়।
What's Your Reaction?