লামা পূর্বচাম্বি থেকে বালু লুটে অপ্রতিরোধ্য আওয়ামী সিন্ডিকেট

মোঃ কামরুজ্জামান, লামা প্রতিনিধ, বান্দরবানঃ
Apr 28, 2025 - 12:31
 0  9
লামা পূর্বচাম্বি থেকে বালু লুটে অপ্রতিরোধ্য আওয়ামী সিন্ডিকেট

লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্বচাম্বি আমতলী এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুইটি পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন শত শত গাড়িতে করে বালু লুটে নিচ্ছে লোহাগাড়ার যুবলীগ নেতা দিদারুল ইসলাম ওরফে জিসান নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা এই যুবলীগ নেতা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই প্রশাসনের একাংশকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বিগত ১৬ বছর ধরে পূর্বচাম্বির বিভিন্ন খাল ও ছড়া থেকে অবিরাম বালু উত্তোলন করে কৃত্রিম বালুর পাহাড় তৈরি করেছে এ চক্র। প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর চলা এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। গত ৫ আগস্ট মাসখানেক বন্ধ থাকার পর ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে এ সিন্ডিকেট।

পূর্বচাম্বি মুসলিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে ডলুখালের পাড় ঘেঁষে দুটি বিশাল বালু স্তুপ গড়ে ওঠে, যেখানে প্রায় আট লাখ ঘনফুট বালু অবৈধভাবে মজুদ করা হয় বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।

স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, লোহাগাড়ার আওয়ামী ক্যাডাররা সরই ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের মাধ্যমে প্রশাসনকে ব্যবহার করে নামমাত্র মূল্যে ওই বালুর স্পট নিলাম করায়। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এ ছাড়া এলাকাটি ‘সন্ত্রাসপ্রবণ’ বলে উল্লেখ করে দ্রুততার সঙ্গে স্থানীয়দের অজ্ঞাতসারে নিলাম সম্পন্ন করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, নিলামের মাধ্যমে বালু বিক্রির দায়িত্ব নেওয়া যুবলীগ নেতা জিসান নির্ধারিত সময়সীমা (১৬ এপ্রিল) পেরিয়ে গেলেও এখনো দিনরাত বালু পরিবহন করছেন। এতে স্থানীয় বনাম লোহাগাড়ার সিন্ডিকেটের মধ্যে প্রাণঘাতী সহিংসতার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা। ইতোমধ্যে এক হামলার ঘটনায় স্থানীয় এক বাসিন্দার হাতের হাড় ভেঙে যায় এবং এ ব্যাপারে লামা থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু সিন্ডিকেট দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি নিয়ন্ত্রণ করছেন সরই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নাসিরের ভাই নাজিম উদ্দিন ও আবুল হোসেন, অপরটি নিয়ন্ত্রণ করছেন দিদারুল ইসলাম জিসান। সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলেন মোঃ আরেফাত, মোঃ মহিউদ্দিন, মোঃ মানিক, মোঃ খালেদ, মোঃ আরিয়ান হাসান ও মোঃ সেলিম উদ্দিন — যাঁরা সবাই লোহাগাড়ার বাসিন্দা।

সূত্র মতে, বিশাল দুটি বালুর স্তুপ মাত্রাতিরিক্ত কম মূল্যে নিলামের মাধ্যমে এ চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, "এলাকাটি দুর্গম ও সন্ত্রাসপ্রবণ হওয়ায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় তাৎক্ষণিকভাবে স্পট নিলাম করা হয়েছে। ১৬ এপ্রিল পরিবহন সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বালু পরিবহন বন্ধের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"

তিনি আরো জানান, সরই ইউনিয়নে আরো পাঁচটি পয়েন্ট থেকে দুই লাখ ঘনফুটের বেশি বালু জব্দ করা হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত আছে।
লামা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বলেন, অবৈধভাবে বালু বা অন্য কোনো মালামাল পরিবহন বন্ধে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow