লামার ফেয়ারি এগ্রো'র বাগান এখন মরুর ধূসরতায় রুপ নিয়েছে

লামা (বান্দরবান)প্রতিনিধি:
Feb 19, 2025 - 21:33
Feb 19, 2025 - 21:35
 0  2
লামার ফেয়ারি এগ্রো'র বাগান এখন মরুর ধূসরতায় রুপ নিয়েছে

বান্দরবানের ডুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন বিভিন্ন বাগানের গাছ সমুহ বন বিভাগের সংশ্লিষ্টদেরকে ম্যানেজ করে নির্বিচারে কর্তন ও পাচার হচ্ছে। এসবের নেপথ্যে নায়ক হচ্ছে সরই ইউপি'র দুইজন সদস্য। এরা হচ্ছে আওয়ামী দোসর নাছির উদ্দিন ও পাইসা প্রু ত্রিপুরা। এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যানের ভাগিনা আনোয়ার হোসেন, শেখ আহমেদ গুনু, কোরবান আলী, মিজান, আল আমিন, কোরবান আলীর বড় ভাই এরশাদ মিলে গাছ উজাড়ে সক্রিয় ভূমিকা পালনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তথ্য রয়েছে যে, শেখ আহমেদ গুনু ও আল আমিন, টঙ্গঝিরি রোডের পূর্বদিকের বাগানের গাছ কাটাচ্ছে। তার বিপরীত দিকের অংশে ছোট ছোট গাছগুলো নির্বিচারে উজাড় করছে হায়দার আলী ও দেলোয়ার। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রমতে, আল আমিনের নেতৃত্বে মাগরিবের আগেই গাড়িতে কাঠ ভর্তী করে নিয়ে যায়। স্থানীয়দের সূত্রমতে, লামা বন বিভাগের ডুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ তার অধিনস্ত বিটগুলোর দায়িত্বরতদের স্বার্থান্ধতা ভয়াবহ বন উজাড় হচ্ছ। সরই ইউনিয়নের বিভিন্ন বাগান মালিকদের অভিযোগ হচ্ছে, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী উত্তেজনাকর সময়কে পুঁজি করে পাহাড়ি বাঙালি সংঘবদ্ধ একটি দল রাজনৈতিক বঞ্ছনার ইস্যু তোলে মানুষের সৃজিত বাগান লুটতরাজ করে চলছে। এদের কাছে দেশীয় অস্ত্র রয়েছে; এমন  আশঙ্খায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যখন তখন ব্যাবস্থা নিতে পারছেন বলেও জানাযায়। অনুসন্ধানে জানাযায়, আজিজনগর ও সরই ইউনিয়নের সীমানায় একটি সংবদ্ধ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে সরই ইউপি সদস্য পাইশাপ্রু ত্রিপুরা ও নাসির উদ্দিন মেম্বার। বন উজাড় কারীরা উপরির বিনিময়ে ডুলছড়ি রেঞ্জ ও পুলিশকে ম্যানেজ করে রাতদিন গাছ কেটে বিভিন্ন পথে লোহাগাড়া চরম্বা ও লামা ফাইতং ইউনিয়স্থ ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তথ্য রয়েছে যে, সরই টঙ্গঝিরিতে ব্যাক্তি মালিকানা একটি বাগান থেকে ১৪/১৫ জন ত্রিপুরা উপজাতি ও বাঙালি শ্রমিক দিয়ে প্রকাশ্যে গাছ কেটে সেখানকার সবুজ পাহাড়গুলোকে ন্যাড়া বানিয়ে ফেলতেছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে স্থানীয়দের সহাতায় টঙ্গঝিরি বাগান থেকে কাঠ নিয়ে যাওয়ার সময় একটি পিকআপ জব্দ করেন বন কর্মচারীরা। সেখানে বিগত ৬ মাস ধরে বন ধ্বংসের এই নীতিহীন প্রতিযোগিতায় মেতে আছে দস্যুরা। বাগান মালিকরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের সকল দপ্তরে অভিযোগ করেও এর কোনো সুরাহা পাননি। নির্বিচারে বন বাগান উজাড় করায় জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিগত দু'দশক ধরে টঙ্গঝিরির বিভিন্ন পাহাড়গুলো সবুজ বৃক্ষ আচ্ছাদিত হয়ে উঠেছিল। জুলাই বিপ্লবের পর ওইসব পাহাড় ন্যাড়া হয়ে এখন মরুর ধূসরতায় রুপ নিয়েছে।

জানাযায়, ফেয়ারি এগ্রো'র সৃজিত শত একর বাগানের গাছ ক্রয় বিক্রি হয় ৩০ লাখ টাকা। এসব গাছ বিক্রি করেছে নাসির উদ্দিন ও পাইসাপ্রু ত্রিপুরা মেম্বার গং। 

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি সরই ইউনিয়নে লুটেরা গাছ চোরদের মাঝে অভ্যান্তরীণ দ্বন্দ্ব চলছে। কারণ হিসেবে জানাযায়, প্রথমতঃ ঘন বিস্তৃত ফেয়ারি এগ্রো'র মালিকানাধীন পাহাড়গুলোতে কাটারমত অবশিষ্ট গাছ আর নেই। দ্বিতীয়ত বিগত দিনের হিসেব নিকেষ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়েছে। 

এর ফলে ইতোপূর্বে গঠিত পাইসাপ্রু ও নাসির মেম্বারের নেতৃত্বে ১২ জনের চোর সিন্ডিকেট ভেঙে দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সিন্ডিকেটের একাংশ জানিয়েছে, ৬ সদস্যের দস্যু টিম নতুন করে ফেয়ারি এগ্রো'র মূল বাংলোর সেগুন গাছ কেটে নেয়ার ছক আঁকছে। কিন্তু এই হরিলুটের পরিকল্পনা প্রকাশ করে প্রতিবেশি শফিক নামের এক যুবক জানান, 'জীবন দিয়ে হলেও এমনটা করতে দিব না'। কারণ হিসেবে এই যুবক জানায়, বাগান বাংলোর পাশ ঘেঁষে তাদের বাড়ি এবং জায়গার অংশের মালিকানা রয়েছে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষে ম্যানেজিং কমিটির প্রধান বানানো হয়েছিল ইউপি মেম্বার নাসির উদ্দিনকে এবং এ্যাকশন টিমের প্রধান পাইসাপ্রু ত্রিপুরা মেম্বার। এই ১২জন গাছ লুন্ঠনকারী ৫০ হাজার করে টাকা নিয়ে ৬ লাখ টাকার প্রাথমিকভাবে একটি তহবিলও গঠন করেছিল বলে গোপন সূত্রে জানাগেছে। ওই তবিলের অর্থ দিয়ে সম্ভাব্য বাঁধাদানকারীদেরকে ম্যানেজ করা হবে। এসব ব্যাপারে মুঠোফোনে নাসির উদ্দিন  মেম্বার, আনোয়ার হোসেন জানান, আগে কিছু কাঠ কিনেছিলাম, শুনেছি সেগুলো চুরি হওয়া কাঠ। তবে কাঠগুলো কার কোন বাগান থেকে এনেছে ত্রিপুরা উপজাতিরা তা জানিনা।' শেখ আহমদ গুনু জানান, 'ঘটনার শুরুর দিকে ফেয়ারি এগ্রো'র বাগানের কর্তিত কিছু গাছ কিনেছিলাম। এসব কাঠ কিনে নেয়ার সময় আমার একটি পিকআপ জব্দ করেছিল লামা বন বিভাগের স্পেশাল টিম। তার থেকে এসব অন্যায় কাজের সাথে আমি নেই।' অপর দিকে অভিযুক্ত কোরবান আলী জানান, 'বিগত ডিসেম্বর মাসে ফেয়ারি এগ্রো'র বাগান থেকে চুরি হওয়া গাছের গাড়ি ধরতে সহযোগিতা করার কারণে পাইসাপ্রু ত্রিপুরা মেম্বার আমাকে (বেনজিরের কতিথ বাগানের) ত্রিপুরাদের জুমঘর পোড়ানো মামলার আসামী করেছে।' সচেতন মহলের দাবি হচ্ছে; ড. ইউনুস প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে চরমভাবে ব্যার্থতায় পর্যবসিত করার মিশনে একটি গ্রুপ কাজ করছে। ওই গ্রুপটি জনসম্মুখে লামা সুয়ালক সড়ক ঘেঁষে ফেয়ারি এগ্রো'র একটি সেগুন বাগান কেটে নিবে! এই ধরনের অপচেষ্টাও করছেন। এরা বান্দরবান জেলার কতিপয় ব্যাক্তিদেরকে লোভ দেখিয়ে এসব অপকর্ম করছে বলে জানাযায়। এসব ব্যাপারে ফরেষ্টের ডুলছড়ি বিট ইনচার্জ করিম জানান, 'আমি অল্প কিছুদিন হয় এখানে দায়িত্ব পেয়েছি। এর মধ্যে বন উজাড় রোধে সার্বক্ষনিক কাজ করছি এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে কাঠভর্তী একটি পিকআপ জব্দ করেছি।' সরই পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আতিকুর রহমান জানান, 'ক্যায়াজুপাড়া ফাঁড়ির দায়িত্ব পেয়েছি অল্পদিন হয়। এরই মধ্যে এলাকায় উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, অপহরণের ঘটনায় সার্বক্ষণিকভাবে টহল দিতে হচ্ছে। এর পরেও কোথাও অবৈধভাবে গাছ কর্তন ও পাচার রোধে আমরা সজাগ রয়েছি।'

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow