লামায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদ্যাপন

সারা দেশের ন্যায় বান্দরবানের লামা চৌকি আদালতের উদ্যোগে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ উদ্যাপিত হয়েছে। "দ্বন্দ্বে কোনো আনন্দ নাই, আপোষ করো ভাই, লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোনো চিন্তা নাই"—এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে সোমবার সকাল সাড়ে নয়টায় একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
লামা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও লামা চৌকি আদালত বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী রিয়াদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আলোচকরা বলেন, সমাজে নারী সংগঠন, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে স্থায়ী আইনগত সহায়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। সভাপতির বক্তব্যে শাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী রিয়াদ বলেন, "একটি নির্দিষ্ট কার্যালয় নির্ধারণ করে কমিটির সদস্যদের নিয়ে একজন লিগ্যাল এইড অফিসার দায়িত্ব পালন করলে এর সুফল পাওয়া যাবে।" তিনি জনসংখ্যা ও প্রয়োজন বিবেচনায় আলীকদমকে লামা কোর্টের আওতায় অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লামা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী সাদেকুল মাওলা, তথ্য অফিসার রাশেদুল হক, লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তোফাজ্জল হোসেন, একতা এনজেড সমিতির নির্বাহী পরিচালক নারী নেত্রী আনোয়ারা বেগম এবং লামা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এডভোকেট মামুন মিয়া সরকার।
সভায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, "মানবাধিকার ও ন্যায্য বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়া সম্ভব। এর জন্য আইনি সহায়তা সেবার পরিধি আরও বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে দেশে প্রায় ১১ লাখ মানুষকে লিগ্যাল এইড সাপোর্ট প্রদান করা হয়েছে, যা মামলার জট কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।"
এডভোকেট মামুন মিয়া সরকারের বক্তব্যে সরকারি বিনামূল্যে আইনি সেবা বিষয়ক নানা দিক তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, "ভূমি জরিপ না হওয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের মামলা এখানে বেশি দেখা যায়।"
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, আইনজীবী, পুলিশ সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী, শ্রমিক, সহিংসতার শিকার নারী-শিশু ও পাচারের শিকার মানুষদের জন্য বিনামূল্যে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে সরকার ২০০০ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা আইন প্রণয়ন করে। এরপর এ আইনের অধীনে বিধিমালা করে দেশের প্রতিটি জেলা আদালত, শ্রম আদালত, চৌকি আদালত ও সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড সেবা চালু করা হয়। বর্তমানে মামলা জট কমাতে লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে পক্ষসমূহের সম্মতির ভিত্তিতে বিরোধ মীমাংসা করা হয়।
What's Your Reaction?






