সাগরে মাছ কম, দুশ্চিন্তায় জেলেরা

মো: সিরাজুল মনির,চট্রগ্রাম ব্যুরো
May 4, 2024 - 14:30
 0  6
সাগরে মাছ কম, দুশ্চিন্তায় জেলেরা

সাগরে দেখা নেই সামুদ্রিক মাছের। জাল ফেললেও মিলছে না ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। যার কারণে সাগর থেকে মাছ শূন্য ট্রলারে ফিরছেন উপকূলের অনেক জেলে।

জেলেদের দাবি, তীব্র দাবদাহে সাগরে মাছ না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরতে হচ্ছে উপকূলে। আর মৎস্য ব্যবসায়ীরা লোকসানে জর্জরিত হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়েও ধস নেমেছে দাবি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কতৃর্পক্ষের।
 
সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর উপকূল; নোঙর করেছে এফবি নিশান ট্রলার। আর ট্রলারে বসে দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই জেলে বশির, শাহেদ, রফিক ও আলীর। গেলো এক মাসে দু’বার ১০ লাখ টাকা খরচ করে তারাসহ ২২ জেলে গিয়েছিলো সাগরে। কিন্তু সাগরে ধরা পড়েনি ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ।

শেষমেশ লোকসানের কারণে ট্রলার মালিক আর সাগরে মাছ শিকারে পাঠাচ্ছেননা জেলেদের। এখন কিভাবে সংসার চলবে বা কবে সাগরে মাছ শিকারে ফিরবেন তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

এফবি নিশান ট্রলারের জেলে বশির আহমেদ বলেন, দুশ্চিন্তা যেন পিছুই ছাড়ছে না। সাগরে গিয়ে ১০ দিন জাল ফেলেও মাছ মিলছে না। তাই বাধ্য হয়ে উপকূলে ফিরতে হচ্ছে।
আরেক জেলে শাহেদুল ইসলাম বলেন, ৫ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছি ১৫ জন জেলে। কিন্তু ১১ দিন সাগরে জাল ফেলে অল্পকিছু মাছ পেয়েছি। যা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রি করে পেয়েছে মাত্র ৬০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে ট্রলার মালিকের লোকসান প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখন ট্রলার মালিক আর সাগরে মাছ শিকারে পাঠাচ্ছে। তাই বেকার হয়ে পড়েছি।
রাশেদ নামের এক মাঝি বলেন, তীব্র গরমের কারণে সাগরের পানিও গরম হয়ে গেছে। তার উপর সাগর উত্তাল। মাছ অনেক গভীরে চলে গেছে। তাই জাল ফেলেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।

কক্সবাজার এলাকার মত চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার জেলেদের ও একই অবস্থা উপকূলীয়  উপজেলা গুলো জেলে সম্প্রদায়েরা সাগরে মাছ মারতে গিয়ে তীব্র গরমের কারণে মাছ না মেরে ট্রলার নিয়ে ফিরে আসে । আনোয়ারার জেলে আব্দুস সালাম জানাই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গেলেও অনেক ঘোরাঘুরির পর ঠিকমতো মাছ না পেয়ে একপ্রকার খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়।

ট্রলার মালিকদের দাবি, তীব্র দাবদাহের পাশাপাশি সাগরে ট্রলিং জাহাজের দৌরাত্মে মাছশূন্য হয়ে পড়ছে সাগর।

ট্রলার মালিক নজরুল ইসলাম  বলেন, সাগরে মাছ মিলছে না। এদিকে তীব্র গরমের কারণে যেমন সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক তেমনি ট্রলিং জাহাজের কারণে সাগর মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। যেভাবে ট্রলিং জাহাজের ব্যবহার বেড়েছে সেক্ষেত্রে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মাছশূন্য হয়ে পড়বে সাগর এমন আশঙ্কা করছি।
একের পর এক ট্রলার সাগর থেকে উপকূলে ফিরছে মাছ ধরার ট্রলার। যা ঘাটে ভিড়লেও নেই মাছ ওঠা—নামা দৃশ্য। বাঁকখালী নদীতে নোঙর করা রয়েছে সারি সারি মাছ ধরার ট্রলার।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র; যেখানে প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকার সামুদ্রিক মাছ বেচা—বিক্রি হয়; সেখানে এখন অনেকটা মাছশূন্য পল্টুন। বেকার সময় পার করছেন মৎস্য শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।

মৎস্য ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম  বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ৩টি পল্টুনে যখন সামুদ্রিক মাছে ভরে যায় তখন মাছ বেচাকেনা হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার। কিন্তু এখন প্রতিদিন মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ কোটি টাকারও কম। এখন ৫’শতাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী খুব বেকায়দায় পড়ে গেছে। 

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কতৃর্পক্ষ বলছে, মাছের আকালের কারণে মৎস্য ব্যবসায়ীরা লোকসানে জর্জরিত হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়েও ধস নেমেছে।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সহকারি হিসাব নিয়ন্ত্রক আশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, গেলো বছর এই সময়টাতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন সেখানে খুবই কম টাকা মাছ বিক্রি হচ্ছে। বলতে গেলে প্রায় ৪০ শতাংশ মাছ বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে রাজস্ব আদায়েও ধস নেমেছে।
কক্সবাজারে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৬৫ হাজারের মতো আর নিবন্ধিত নৌযান রয়েছে প্রায় ৬ হাজার।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow