সাভারে ৯ টুকরো মরদেহ: নিষিদ্ধ অ্যাপ, ব্ল্যাকমেইল ও হত্যার রহস্য উদঘাটন

মোঃ শামীম আহমেদ, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ
Apr 13, 2025 - 14:31
 0  17
সাভারে ৯ টুকরো মরদেহ: নিষিদ্ধ অ্যাপ, ব্ল্যাকমেইল ও হত্যার রহস্য উদঘাটন

নিষিদ্ধ একটি অ্যাপের মাধ্যমে পরিচয়, এরপর নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল—এই সূত্র ধরেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাজ্জাদ হোসেন সবুজ (২৬)। হত্যার পর মরদেহ ৯ টুকরো করে কার্টুনে ভরে ফেলে দেওয়া হয় কেরানীগঞ্জ ও পদ্মা সেতুর কাছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ক্লুলেস এই হত্যারহস্যের জট খুলেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনায় জড়িত সুমাইয়া আক্তার ও তার কথিত স্বামী রোকনুজ্জামান ওরফে পলাশকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

শনিবার (১২ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় পিবিআই। এর আগে গ্রেপ্তারকৃত দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পিবিআই জানায়, গত ৩ মার্চ সাভারের হেমায়েতপুরের যাদুরচর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সাজ্জাদ হোসেন সবুজ। পরদিন সকালে কেরানীগঞ্জের সড়কের পাশে ফেলে রাখা দুটি কার্টুনে মরদেহের খণ্ডিত অংশ দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। এরপর পদ্মা সেতুর কাছ থেকেও আরও একটি কার্টুনে মরদেহের অংশ পাওয়া যায়।
পরিবারের দেওয়া নিখোঁজ জিডির সূত্র ধরে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হয় সাভার মডেল থানা পুলিশ।

মরদেহের পরিচয় শনাক্তের পর র‍্যাব, সিআইডি, ডিবি, পিবিআইসহ একাধিক সংস্থা তদন্তে নামে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে পিবিআই ঢাকার মোহাম্মদপুরে এক নারীর অবস্থান শনাক্ত করে। তাকে গ্রেপ্তারে কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালানো হয়।

গত ৮ এপ্রিল দুপুরে ফেনী থেকে গাবতলীতে এসে কুষ্টিয়ার জিবননগরগামী বাসে উঠেছিলেন সেই নারী। পিবিআই’র একটি দল তাঁর পিছু নেয়। রাত ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গায় বাস থামলে নারী ও তাঁর এক আত্মীয়কে নামার সময়ই আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী জানান, তারা মূল অভিযুক্ত রোকনুজ্জামান ওরফে পলাশের সঙ্গে ভারতে পালানোর পরিকল্পনা করছিলেন। পরবর্তীতে পলাশের খালার বাড়ি থেকে তাকেও গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

পিবিআই ঢাকা জেলার পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, দুই মাস আগে সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় সাজ্জাদ হোসেনের। একপর্যায়ে সাজ্জাদ সুমাইয়ার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুমাইয়া বিষয়টি রোকনুজ্জামানকে জানান। দুজন মিলে সাজ্জাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩ মার্চ মোহাম্মদপুরের ভাড়া বাসায় সাজ্জাদকে ডেকে নিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে হত্যা করেন সুমাইয়া ও রোকনুজ্জামান। মরদেহ ৯ টুকরো করে তিনটি কার্টুনে ভরে ফেলা হয়। দুইটি কার্টুন ফেলা হয় কেরানীগঞ্জে এবং আরেকটি পদ্মা সেতুর কাছে।

গত ১০ এপ্রিল ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রেপ্তার দুইজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow