সালথায় একশত মিটার রাস্তার অভাবে ভোগান্তিতে একটি গ্রামের শত শত মানুষ

জাকির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার
Nov 1, 2024 - 19:50
 0  12
সালথায় একশত মিটার রাস্তার অভাবে ভোগান্তিতে একটি গ্রামের শত শত মানুষ

ফরিদপুরের সালথায় মাত্র একশত মিটার রাস্তার অভাবে ভোগান্তিতে আছে একটি গ্রামের কয়েকশত মানুষ। শুধু তাই নয় ঐ একশত মিটার রাস্তার প্রভাব পড়েছে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের উপরেও। উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম সোনাডাঙ্গী। চলাচলের একমাত্র পথ পাড়ি দেওয়ার সময় যাদের ভোগান্তির কোন শেষ থাকে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কাঁদা-মাটি মাখামাখি করেই স্কুলে যাতায়াত করে আসছে। বাংলাদেশের এত উন্নয়ন যেন তাদের কোন কাজেই আসছে না।  গ্রামের মধ্য দিয়ে পায়ে হাঁটার রাস্তা থাকলেও অপরপাশ দিয়ে গ্রাম থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা নেই।

সকাল হতেই পাখির কলকাকলীতে ঘুম ভাঙ্গে গ্রামবাসীর। শিক্ষার্থীরা মক্তব শেষ করে স্কুল ও মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য তৈরী হয়। বর্ষাকালে পানি আর পাট মৌসুমে শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট সহ্য করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়। তবে বছর জুড়েই তাদের কষ্ট থাকে। গ্রামের নারী ও বৃদ্ধদের কষ্ট যেন আরও বেশি। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের রাস্তার চিন্তায় যেন ঘুম হারাম। যদি কোন সমস্যা হয় কিভাবে তারা হাসপাতালে যাবে আর কিভাবেই তারা ফিরে আসবে? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে খেতে বৃদ্ধরা আর গ্রাম থেকে বের হতে চায় না।

সরেজমিনে কাঁদা-মাটি মাড়িয়ে সোনাডাঙ্গী গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নতুন একটি মসজিদ। সেখানে গ্রামবাসীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, মসজিদে ৫ ওয়াক্ত আজান ও নামাজ হয়, রয়েছেন একজন ঈমামও। শতভাগ বিদ্যুতায়িত গ্রামে প্রায় অর্ধশত পরিবারে ভোটার সংখ্যা শতাধিক। রয়েছে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী যারা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। গ্রামের সবাই মুসলিম ধর্মের অনুসারী। আলো-বাতাস, চারিদিকে ছায়া, সবুজ একদম ছবির মত গ্রাম। সহজ সরল এই মানুষের কাছে গ্রামে রাস্তা না থাকাটা যেন একটা দীর্ঘশ্বাস। তবে রাস্তা নির্মানের জন্য কোনভাবেই জমি দিবে না বলে জানিয়েছেন জমির কয়েকজন মালিক।

চারপাশে গাছপালা আর সবুজে ঘেরা গ্রামের কৃষকের কষ্ট দেখার যেন কেউ নেই। গ্রামের রাস্তা না থাকায় তারা অল্প অল্প করে ১শ মিটার কাঁদা-পানি, কুয়াশা, ফসলের মাঠ পেরিয়ে যায় মুল কাঁচা রাস্তায় সেখান থেকে গাড়িতে করে নিয়ে যেতে হয় হাট বাজারে। এই কাজের জন্য অনেক শ্রম ও সময় নষ্ট হয়। আবার পাশের কয়েক গ্রামের কৃষকেরা মাঠ থেকে তাদের ফসল তুলতে খুব বেগ পেতে হয়। কারণ গ্রামের উল্টো পাশে রয়েছে বিশাল ফসলের মাঠ। সেখান থেকে ফসল সংগ্রহ করতে উৎপাদন খরচ ও ঝুঁকি বেড়ে যায়। মাত্র ১শ মিটার রাস্তার জন্য পুরো কয়েক গ্রামের মানুষের ভোগান্তি চরমে।
২০১৯ সালে গ্রামের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যায় বিদ্যুৎ, ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গ্রামবাসীর সংখ্যা। আর জোড়ালো হয় রাস্তার দাবি। গ্রামের সবাই শান্ত ও নিরিহ প্রকৃতির লোক। গ্রামে কখনই পুলিশ প্রবেশ করে নাই। রাস্তা না থাকায়  পুলিশের গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহ জরুরি সেবার কোন গাড়িই প্রবেশ করতে পারবে না। গাড়ি তো দুরের কথা বাইসাইকেল বা পায়ে হাটার কোন ব্যবস্থা নাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দিদার ফকির বলেন, রাস্তা না থাকায় সোনাডাঙ্গী এলাকার বিবাহযোগ্যা ছেলে মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না। সামান্য একটু রাস্তার জন্য তাদের সীমাহীন কষ্ট হয়। চেয়ারম্যান মহোদয় সহ আমরা বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু একটু সমস্যা থাকায় পারি নাই। এবার জোর দিয়ে চেষ্টা করবো।
বল্লভদী ইউপির চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন বলেন, রাস্তা না থাকার কারনে সোনাডাঙ্গী গ্রামের মানুষের চলাচল করতে অনেক কষ্ট হয়। আমি বেশ কয়েকবার পদক্ষেপে নিয়ে ব্যার্থ হয়েছি। মুল সমস্যা ঐ গ্রামের সাথে কোন হালট নেই। তাছাড়া রাস্তা ব্যাক্তি মালিকানা জমি দিয়ে রাস্তা নিতে গেলে জমির মালিক বাধা দেয়া। আমি বাইরে আছি, পরিষদে গিয়ে তারপর সোনাডাঙ্গী ও আশপাশের গ্রামের জমির মালিকদের সাথে কথা বলে দেখছি।

এই বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আনিসুর রহমান বালী বলেন, রাস্তা না থাকায় গ্রামের মানুষের চলাচলের সমস্যার কথা আমরা জানতে পেরেছি।  এখানে সরকারি কোন হালট না থাকায় সরকারিভাবে কোন রাস্তা করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করবো গ্রামবাসিদের সমঝোতায় যদি তারা জমি দিতে চায় সেক্ষেত্রে সরকারিভাবে রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow