স্বামীর বাড়িতে দ্বিতীয় বিয়ের পর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ পরিবারের

মোঃ আজমল হোসেন, বালিয়াকান্দি রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ
Apr 29, 2025 - 14:49
 0  2
স্বামীর বাড়িতে দ্বিতীয় বিয়ের পর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেম, এরপর মোবাইল ফোনে বিয়ে। চার বছর আগে সৌদি আরব প্রবাসী নিরবের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন রাজবাড়ীর কলেজছাত্রী রিয়া (১৯)। সম্প্রতি দেশে ফিরে স্ত্রীকে প্রথমবারের মতো নিজ বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে রাজি হননি রিয়া। একপর্যায়ে কাজীর মাধ্যমে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করেন তিনি। কিন্তু বাবার চাপে ফের স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হয় রিয়াকে। সেখানেই দ্বিতীয়বার বিয়ের পর মেলে তাঁর নিথর দেহ।

স্বামীর পরিবারের দাবি, রিয়া আত্মহত্যা করেছেন। তবে মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মা নাসিমা বেগম। সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে রাজবাড়ীর কালুখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে নাসিমা বেগম বলেন, “বিচ্ছেদের পর আমি গার্মেন্টসে কাজ করে রিয়াকে বড় করেছি। ও এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। নিরবের পরিবারের নির্যাতনে সে আগেও শ্বশুরবাড়ি ছেড়েছিল। কিন্তু এবার পুলিশ ও আত্মীয়দের চাপে তাকে জোর করে ফের পাঠানো হয়। তারপরই মেয়েকে হারালাম।”

নাসিমা বেগম জানান, চার বছর আগে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার কালিদাস ঠকানীপাড়া গ্রামের বাবুলের ছেলে নিরবের সঙ্গে রিয়ার মোবাইল ফোনে বিয়ে হয়। বিয়ের পর পাঁচ মাস শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন রিয়া। তখন থেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন তাঁর মা। এরপর থেকেই রিয়া মায়ের সঙ্গে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বিকয়া গ্রামে বসবাস করছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন নিরব। গত বৃহস্পতিবার কলেজে গিয়ে রিয়াকে হুমকি দেন তিনি। পরে মামাবাড়িতে গিয়ে অভিভাবক ছাড়া রিয়াকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাধা দেওয়া হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিয়াকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন।

এরপর ২২ এপ্রিল সকালে রিয়া তাঁর খালার বাড়ি থেকে কাজীর মাধ্যমে নিরবের কাছে বিচ্ছেদপত্র পাঠান। একই দিনে রিয়ার বাবা আমিরুল ইসলাম পাংশা থানায় একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পর পাংশা থানার এসআই শাওনসহ রিয়ার বাবা, চাচা-চাচির উপস্থিতিতে রিয়াকে জোর করে নিরবের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চরপাড়া গ্রামে নিরবের বাড়িতে। সেখানে আবারও তাঁদের বিয়ে হয়।

রিয়া ওই রাতে মাকে ফোন করে বলেন, “আমাকে বাঁচাও, আমাকে মেরে ফেলবে।” পরদিন বিকেলে খবর আসে রিয়া আত্মহত্যা করেছে।

তবে রিয়ার মা নাসিমা বেগমের দাবি, “মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরে মরদেহ এনে বিকয়া গ্রামে দাফন করা হয়। আমি যখন মামলা করতে চাই, তখন রিয়ার বাবা অপমৃত্যুর মামলা করে।”

রিয়ার খালা রোজিনা পারভীন বলেন, “এসআই শাওন, রিয়ার বাবা ও আত্মীয়রা জোর করে ওকে নিয়ে গেছেন। রিয়া যেতে রাজি ছিল না। আমি নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার চাই।”

এ বিষয়ে পাংশা থানার এসআই শাওন বলেন, “আবেদনের ভিত্তিতে রিয়াকে উদ্ধার করে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। জোরপূর্বক দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow