১৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা

এমএম জামান, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ
Apr 9, 2025 - 19:52
 0  7
১৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ষষ্ঠ শ্রেণির ১৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে শিশুটি। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বোয়ালমারী থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী গ্রামের ওই শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করে আসছিলেন প্রতিবেশী কিতাবদী শেখের ছেলে মুকুল শেখ (৪৮)। পাঁচ সন্তানের জনক মুকুল শেখকে একাধিকবার নিষেধ করা হলেও তিনি তা শোনেননি, উল্টো শিশুটির বাবাকে হুমকি-ধমকি দেন।

গত ১২ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশে সরিষা ক্ষেতে শাক তুলতে গেলে মুকুল শেখ জোরপূর্বক শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। এরপর মেয়েটি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৮ মার্চ তাকে মোল্লা ডা. এ হালিম হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক শোভন সাহা পরীক্ষার পর জানান, শিশুটি অন্তত দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মেয়েটি তখন চিকিৎসকের কাছে জানায়, তাকে মুকুল শেখ জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে।

অভিযুক্ত মুকুল শেখ ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং মামলা করলে শিশুটির পরিবারকে খুন-জখমের হুমকি দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। ৮ এপ্রিল মেয়েটিকে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন বলেন, “ভুক্তভোগীর বাবার কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি এবং সত্যতাও পাওয়া গেছে। গ্রামের কয়েকজন মুরব্বি বিষয়টি মীমাংসার পক্ষে মত দিয়েছেন, তবে ভুক্তভোগী পরিবার যা চাইবে সেটাই হবে।”

বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মেয়েটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”

এদিকে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন অভিযুক্ত মুকুল শেখ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, মুকুল শেখ এর আগেও এলাকায় একাধিক অনৈতিক ঘটনায় জড়িত ছিলেন। তবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পাননি।

শিশুটির পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। শিশুটির বাবা বলেন, “আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেল। আমরা গরিব মানুষ, কিছু করতে পারিনি। এখন মামলা করেছি, যেন দোষী বিচার পায়।”

স্থানীয় নারী অধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে। তাঁদের মতে, এমন নৃশংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে।

ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, “১৩ বছর বয়সী কোনো শিশুর বিরুদ্ধে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনা নিছক ফৌজদারি মামলা নয়, এটি সমাজের এক গভীর অবক্ষয়ের চিত্র। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি—মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনায় শুধু আইনি বিচারের নিশ্চয়তা নয়, বরং ভুক্তভোগী শিশুর শারীরিক ও মানসিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও অত্যন্ত জরুরি।”

পুলিশ জানিয়েছে, মামলার পর অভিযুক্ত মুকুল শেখকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow